স্বরূপকাঠির পাঁচ জয়িতার গল্প

0
(0)

হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
নারী পুনর্জাগরনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯ তম জন্ম এবং ৮৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পাঁচজন সপল নারীকে জয়িতা সন্মাননা (ক্রেষ্ট ও সনদ) প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে ওই সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুসরাৎ জাহান জানান, এ বছর এ উপজেলা থেকে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জলাবাড়ি ইউনিয়নের বিশ^নাথ বড়ালের স্ত্রী শিপ্রা রানী বড়ালকে সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ৫ম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় রিক্সা চালক বিশ^নাথের সাথে বিয়ে হয় শিপ্রার। বিয়ের পরে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তার সংসার চলত। এক পর্যায়ে সে ব্রাক থেকে বিশ হাজার টাকা ঋন নিয়ে ছোট একটি মুরগীর খামার গড়ে তোলে এবং স্বামিকে একটি ভ্যান গাড়ী কিনে দেয়। দিনে দিনে তার পরিশ্রমের ফলে খামার বৃদ্ধি পেতে থাকে বর্তমানে সে তার খামার থেকে প্রতিমাসে বিশ হাজার টাকা উপার্জন করে। অভাব কাটিয়ে সে এখন তার স্বামি সন্তানকে নিয়ে সুখে আছে। শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে পৌর এলাকার মাগুরা ৯ নং ওয়ার্ডের মো. রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আফসানা মিমিকে সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ৮ম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় তার বিয়ে ঠিক করলে পড়ালেখা বন্ধের ভয়ে সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায়। পরে পড়ালেখা করানো হবে শর্তে রফিকুল ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। এসএসসি পাশের পর একদিকে শশুর বাড়ির লোকজন তাকে পড়াতে বাদ সাধে অপরদিকে তার স্বামি প্রতারকের খপ্পরে পড়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে এলাকায় ঋনি হয়ে পড়ে। এসময় আফসানা তার পড়ালেখার খরচ জোগাতে প্রথমে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে, পড়ে দর্জি প্রশিক্ষন নিয়ে বাসায় সেলাইয়ের কাজ করে, কখোনও স্কুলে পার্টটাইম শিক্ষকতা করে। এভাবে করে সে ধাপে ধাপে তার এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি, মাষ্টার্স ও এলএলবি পড়াশোনা সমাপ্ত করে। মাঝে সে স্বামি সংসার ও পড়ালেকার খরচ জোগানোর পরিশ্রমের পলে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার একে একে ৬ টি বাচ্চা গর্ভে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে সে ভীশন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার অসুস্থতার খবর পেয়ে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বর্তমানে আফসানা বরিশাল জজকোর্টে প্রাকটিস করছেন এবং তার দুটি ছেলেকেই লেখাপড়া করাচ্ছেন। এলাকায় স্বামির ঋনও শোধ করেছেন। সোহাগদল ইউনিয়নের আলকিরহাট এলাকার আব্দুল লতিফ এর স্ত্রী মোছা. জাহানারা বেগমকে সফল জননীর সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ৯ম শ্রেনী পড়াবস্থায় জাহানারার বিয়ে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্বেও নিজে লেখাপড়া করতে না পেরে প্রতিজ্ঞা করেন তার পাঁচ সন্তানকে লেখাপড়া করাবেন। তাই স্বামির অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন একটা ভাল না থাকায় নিজে কুটির শিল্প গড়ে তোরে সন্তানদের লেখাপড়া করান। তার বড় ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম এন আর বি ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, মেঝ ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক, সেজ ছেলে হাফিজুল ইসলাম প্রাইম ব্যাংক লিঃ এ প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছন। ছোট ছেলে এফ এম রিয়াজুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস এর ফিন্যান্স এন্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের সদস্য। একমাত্র মেয়ে লাইজু আক্তারও ¯œাতক পাশ করেছেন। তিনি একজন সফল জননী। দৈহারী ইউনিয়নের চিলতলা গ্রামের পারভীন আক্তারকে নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার উপর সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। স্বামির চাহিদামত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামি কর্তৃক পারভীনকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থয় স্বামি তার গায়ে গরম চায়ের পানি ঢেলে নির্যাতন করে এবং বুকের হাড় ভেংগে দেয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে আসে দরিদ্র প্রিত্রালয়ে পড়ে এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কাজে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায় পরে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইজিএ প্রকল্পের দর্জি প্রশিক্ষন গ্রহন করে কাজ শুরু করেন। এখন সে স্বাবলম্বি হয়ে তার পিতার চিকিৎসার ও দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। সারেংকাঠি ইউনিয়নের গোবিন্দগুহকাঠি এলাকার সুভাষ মন্ডলের স্ত্রী হিরন্ময়ী মন্ডলকে সমাজে উন্নয়নে অবদান রাখায় সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ব্রাকের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রশিক্ষন নিয়ে এলাকার নারীদের মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কাজ করেছেন। এলাকায় নারী নির্যাতন, বালবিবাহ বন্ধ, যৌতুক বন্ধ, বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে ও বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি বর্তমানে গোবিন্দগুহকাঠি এলাকায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে শিক্ষাদান দিয়ে থাকেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.