বহুগুনের হামজাম

মো. আহছান উল্লাহ,
মাঝারি আকারের ঝোপঝাড়যুক্ত সবুজ বৃক্ষ, কেবল বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। বছরে একবার ফল দেয় আবার এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুষ্প থেকে মধু আহরন করে অমৃত সঞ্চার করে মধু-মক্ষিকারা। ফলেরও আছে অসাধারন ঔষধি গুন।
এক সময় দেশের সর্বত্র এই ভেষজ গাছটির দেখা মেললেও বর্তমানে এটি বিলুপ্ত প্রায়। ঝড়-বৃষ্টি, রৌদ্র, শৈত্য প্রবাহ সবকিছুকে হাসি মুখে বরন করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজতেœ অবহেলায় বিভিন্ন নামে দাড়িয়ে আছে হামজাম ফলের গাছ। অথচ এ ফলের অসাধারন ঔষধি গুনের কথা অনেকেরই অজানা।
কোন রকম পরিচর্জা ছাড়াই ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে হামজাম ফলের গাছ। অঞ্চল ভেদে কাকফল, কাকজাম, হামজাম, ছেরাবেরা, কাউয়াঠুটি, আমঝুম, আমজাম, খেজুরজাম, ভূতিজাম, কাজলঘড়ি ইত্যাদি নামে পরিচিত।
এর বৈজ্ঞানিক নাম খবঢ়রংধহঃযবং ৎঁনরমরহড়ংধ. ইংরেজি নাম জঁংঃু ংধঢ়রহফঁং, পরিবার ঝধঢ়রহফধপবধব. মূলত এটি বনে-জঙ্গলে অযতœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে। এই ফল গাছের আকার মধ্যমাকৃতির, পাতার গড়ন আম পাতার মতো হলেও অনেক নরম। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত পাকা ফল পাওয়া যায়। হিমালয় অজ্ঞল ছাড়া এশিয়ার প্রায় দেশেই হামজাম ফলের দেখা মেলে। এর আধিনিবাস কোথায় জানা না গেলেও থাইল্যান্ডের কিছু কিছু এলাকায় এর বানিজ্যিক চাষ হয়। আমাদের দেশে এক সময় বনে জঙ্গলে এর অহরহ দেখা মেললেও এখন বিলুপ্ত প্রায়।
গাছে ফল গুচ্ছবদ্ধ অর্থাৎ থোকা আকারে ধরে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আধাপাকা অবস্থায় গোলাপি-লাল, পাকলে উজ্জ্বল কালো রঙ ধারণ করে। দেখতে অনেকটা কপি বা কালো জামের মতো, কিন্তু আকারে ছোট, অনেকটা ক্ষুদি জামের মতো। কাঁচা ও আধাপাকা অবস্থায় ভীষণ কষওয়ালা, পাকলে কষ ভাবটা অনেকটা কেটে যায় ও মিষ্টি হয়। এ গাছের ফুলে আছে মধু। এটা পাখিদের ফল হলেও গ্রামের শিশু কিশোররা এই ফল খেতে পছন্দ করেন।
থাইল্যান্ড বোটনিক্যাল গার্ডেন অর্গনাইজেশন প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডে হামজাম ফলকে মহুয়াত ফল বলা হয়। থাইল্যান্ডে এ ফলদিয়ে ক্লোন ক্যান্সার, প্যারালাইসেস, বিকল কিডনি ও জ¦ড় নিরাময়ে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আইয়ুর্বেদ মতে হামজামের ফল রুচিকর, মলসঞ্চারক, কিডনি সমস্যায়, জ¦র, জিভ ও মুখের ঘা এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তবে গাছটির পাতা, ছাল ও শিকর বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।