0
(0)

মো.আহছান উল্লাহ।
যে বয়সে শৈশবের দুরন্তপনায় মেতে থাকার কথা। অথচ সে বয়সে বিশাল বাংলার কচি মূখের রাখাল বালিকার কোমল হাতে অসম কাজ। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের বিস্ময়কর রাখাল বালিকা সদা হাস্যজ্জল স্মৃতি আক্তার (১২)। আর পাঁচটি কিশোরীর চেয়ে ব্যতিক্রম স্মৃতি। তাকে নিয়ে এলাকায় আছে নানা রোমাঞ্চকর কৌতুহল। তবে তার জীবন সংগ্রামের গল্পটা সচেতনদের ভাবান্তর ঘটায়। করোনা ক্রান্তিতে বিস্ময়কর রাখাল বালিকা হওয়ার পিছনের কারন জানে না অনেকেই।
বিস্ময়কর রাখাল বালিকা স্মৃতিকে সংসারে মায়ের কাজে সহযোগীতা করে, প্রতিদিন চরতে হয় ৪/৫টি নারকেল গাছে। সামাল দিতে হয় ৪টি গরু, ৬টি ছাগল। সব ঝামেলা সামাল দিয়ে কোমলমতি ছোট ভাইবোনদেরও খেলার সাথি হতে হয় তাকে।
উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের আনোয়ার হাওলাদারের মেয়ে স্মৃতি আক্তার। বাবা,মা,স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে আট সদস্যর পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আনোয়ার একাই। সম্পদহীন সুখি পরিবারটি ভালোই চলছিল আনোয়ারের একার আয়ে। তার চারটি সন্তান সবই ছিল স্কুলমূখি। তবে স্কুল খুললে ভাইবোনদের স্কুলে যাওয়া হলেও, স্মৃতির হয়ত আর স্কুলে যাওয়া হবে না। স্মৃতি আক্তার ভাইবোনের মধ্যে মেঝ। বাবার অভাবি সংসারে একটু সহযোগীতা আর ছোট ভাইবোনদের ছোটখাট আবদার মিটাতেই স্মৃতি বিষ্ময়কর হয়ে উঠে। অভাবের কারনে বাসায় ঝিয়ের কাজ করতে নিতে চেয়েছিল অনেকে কিন্তু স্মৃতি রাজি হয়নি তার ইচ্ছা পরিবারের সাথে থেকে নিজের পায় দাড়ানো। আনোয়ারের বাবা,মা,স্ত্রী অসুস্থ্য। কিন্তু করোনায় কর্মহীন হয়ে যাওয়ার কারনে সংসারের হাল ধরতেই তাদের পরিবারে এই অসম গল্পের সুচনা।
যত বড় নারকেল গাছ হোকনা কেন, স্মৃতি আক্তারের সে নারকেল গাছে চরে ৪/৫ মিনিটেই নারকেল নিয়ে নিচে নেমে আসতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন ছোট বড় ৪/৫টি নারকেল গাছে উঠেন। আর এ কাজটি এখন নিজ মহল্লায় করে, এলাকার বাইরে যায় না। নারকেল গাছে চরে তার প্রতিদিন ৩/৪শ টাকা আয় হয়। চারটি বড় গরু ও ৬টি ছাগল। এ গুলো জমিতে চরানো ঘাস কাটা,গোসল করানোর ঝামেলা তাকেই সামলাতে হয়। করোনা ক্রান্তির অভাবে অসুস্থ্য মা খাদিজা বেগম সেলাই করেন খাতা। কেননা আট সদস্যর অভাবের সংসারে কারো মুখাপেক্ষি না হয়ে নিজেদের সল্প আয়েই তৃপ্ত তারা ।

গতকাল বুধবার কথা হয় স্মৃতি আক্তারের সাথে জানতে চাওয়া হয় তার এ অসম কাজের বিষয়ে। শিশুশূলভ আচরনে বললেন বাবা,মা ছোট ভাই বোনের কষ্ঠ সয্য হয় না। আর ছেলেরা যে কাজ করে আমরা তা কেন পারব না। স্মৃতি ভবিষ্যতে গরুর খামার করার সপ্ন দেখছে।
স্মৃতি আক্তারের মা খাদিজা বেগম জানান,ও (স্মৃতি আক্তার) আমার মেয়ে না ও একটা ছেলের চেয়েও বেশী। আমরাও ওর কাজ দেখে অভাগ হয়ে যাই। নারকেল গাছে সখের বসে উঠতে গিয়ে এখন ওটা দিয়ে আয় করেছে। এখন উঠতে নিষেধ করি, কিন্তু কৌতুহলি মানুষের কারনে ওকে প্রতিদিনই নারকেল গাছে উঠতে হয়।
স্মৃতির দাদী নিলুফা বেগম জানান,ঘরের মধ্যে আমরা তিনটা মানুষ অসুস্থ্য চাইছিলাম গরু কয়টা বেইচা দিমু কিন্ত ওর জন্য পারি নাই। ওর ইচ্ছা এই গরু দিয়া ও অনেক বড় খামার করবে। ওকে এলাকার সবাই ভালো জানে।
উত্তর পালরদী গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাবিল গাইন বলেন, ‘মেয়েটি খুবই ভালো। অভাবের সংসারে মা-বাবাকে সহায়তা করছে। তবে তার কাজটা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমি চাই, মেয়েটি পড়াশোনাটা চালিয়ে যাক। এ অবস্থায় তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.