0
(0)

আবদুল্লাহ আল নোমান//
আল্লাহতায়ালার কৃপায় আমরা রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিক্রম করে প্রবেশ করেছি নাজাতের দশকে। একান্ত একাগ্রতা ও প্রচন্ড নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করার বিশেষ তাগিদ নিয়ে আসে রমজানের শেষ দশক অর্থাৎ নাজাতের দশক। বিগত বছরে আত্মায় সংগোপনে সঞ্চিত সব পাপ অপরাধ ও হৃদয়াভ্যন্তরে পুঞ্জীভূত সব পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে সজ্জিতরূপে সজ্জনে পরিণত হওয়ার দশক। আর এ দশকে মুমিন-মুত্তাকিরা লাইলাতুল কদরের সন্ধানে থাকে।
হযরত রাসূল পাক (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জীবনে আগত প্রতিটি রমজানের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাত্রিতে এ সম্মানিত রজনীকে তালাশ করো।’ অর্থাৎ রমজানের ত্রিশটি দিবস অসম্ভব কঠোর সাধনায় অবিরাম আরাধনার পর এ মাসের প্রায় শেষ প্রান্তে সে আরাধক তার কাংখিত রাতের সন্ধান লাভ করবে। এটাই হলো রমজানের নিবিড় এবাদতের মর্মকথা। নদীর জলের মাছগুলো যেমন জেলের ছড়ানো জালের শেষ প্রান্তে এসে জমা হয় তেমনিভাবে রমজানের যতসব কল্যাণ তার সবটুকুই সে মাসের শেষ দশকে এসে সঞ্চিত হয় আর সেই অংশের কোন বেজোড় রাত্রিতেই আত্মগোপন করে থাকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ও ঐ রজনী, ঐশী জগতে যার নাম ‘লায়লাতুল কদর’। অতএব পুণ্যে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান লাভ করা কোন সাধারণ বিষয় নয় এবং এটি কোন সাধারণ কাজও নয়। যে মহাজন বছরের প্রতিটি দিবস রাত সাতিশয় সাধনায় দ্বীনের এবাদতে ব্রত থেকে পুণ্যতায় পূর্ণ হতে পারবেন কেবল তিনিই সন্ধান পাবেন সে রাতের সওগাত সম্ভার।
মহান আল্লাহপাক তার পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে বলেন, ‘স্মরণ রেখো, আল্লাহ্র স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (১৩:২৮)। মুমিন মাত্রই মাহে রমজানের পবিত্রতায় আল্লাহ স্মরণের মাত্রাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়, এবাদতের একাগ্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এমন কোন পুণ্যের কাজ নেই যা কিনা সে হাতছাড়া করে। তখন তার অন্বেষণ মাত্র একটাই, আর তা হলো, লায়লাতুল কদরকে প্রাপ্ত হওয়া। এ প্রাপ্যতার মাঝেই সে আত্মার শান্তি আর এ উপার্জনের মাঝেই সে জীবনের সার্থকতা। প্রতিটি বছর রমজান তার সেই স্বর্গ-সুধা প্রদানের জন্যই আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করে।
আসুন না আমরা সবাই রমজানের অবশিষ্ট এই দিনগুলো সিয়াম সাধনায় নিবিড়চিত্তে নিবেদিত হয়ে সে মাহাত্ম্য আহরণে মত্ত হই আর অনেক বেশি কোরআন পাঠ করি। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘শাহরু রামাজানাল্লাযী উনযিলা ফিহিল কোরআন অর্থাৎ রমজান সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজেল হয়েছে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
সুতরাং রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলো রোজা পালন এবং ইবাদতের সাথে কোরআন পাঠ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অতীব পুণ্যের কাজ। আত্মাকে ঐশী সাজে সাজানোর এক বিশেষ সময়। তবেই হাশরের দিন রমজান ও কোরআন এ বলে আমাদেরে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে, ‘হে খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কু-প্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, এ কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে শুইতে দেইনি, সুতরাং এই কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো’ (বাইহাকি)। এ দ্বিবিধ ইবাদতে আমরা যত নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হবো রমজানের এ শেষ দশক আমাদের জন্য ততই কল্যাণকর হবে।
এছাড়া রমজানের এই শেষ দশকেই রয়েছে আত্মার নাজাতের প্রতিশ্রুতিসহ লায়লাতুল কদরের উপহার। এমনিভাবে বিভিন্ন ইবাদতে খোদা মানুষের আত্মার মঙ্গলার্থে নানান উপায়ে মজুত রেখেছেন তার অনন্যসব অবদান। এসব ব্যবস্থাদি মানুষের প্রতি খোদার অনুকম্পা প্রদর্শনেরই প্রমাণ। তাই আমাদের সবার উচিত হবে খোদা সকাশে ধর্ণা দিয়ে সেসব অনুকম্পাদি আহরণ করা। নচেৎ জীবন হবে মূল্যহীন। আমরা তো কোনভাবেই প্রত্যাশা করতে পারি না যে, আমাদের জীবনে আবারও এ রমজান ফিরে আসবে। আবারও এর তৃতীয়াংশের অবদান লাভ করতে পারবো। তাই আমাদের প্রত্যেকের স্বীয় আত্মার নাজাতের জন্য এখনই ক্রন্দনে রত হয়ে যাওয়া উচিত। এই দশকে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে এমন পবিত্র পরিবর্তন ঘটাতে যাতে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.