প্রাকৃতিক পন্যে আসছে বৈদেশিক মূদ্রা

মো. আহছান উল্লাহ।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্তÍ গ্রাম বাঘার। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরের প্রত্যন্ত এই গ্রামের নারী পুরুষের সুনিপুন হাতে তৈরি বাঁশ, বেত ও পাটের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পন্য যাচ্ছে বিদেশে। এতে বছরে প্রায় কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে ।
বাঘার গ্রামে তৈরি বাঁশ বেতের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পন্য জাপান, আমেরিকা, কানাডা, চায়না, অষ্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ দশ দেশে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে এ গ্রামের ৩৫টি নিম্ন আয়ের পরিবার।
এ পণ্য রপ্তানির উদ্যোক্তা বাঘার গ্রামের বাসিন্দা বিনয় ভ‚ষন বেপারি (৭০)। তিনি নিজ গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের মাধ্যমে পাখির বাসা, ফুড বাস্কেট, চা ছাকনি, চুলের ব্যন্ড, কানের দুল, কলমদানি, লুডুস চালনিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক পন্য তৈরি করে, রপ্তানি উপযোগী করে বিদেশে পাঠান।
জানতে চাইলে বিনয় ভ‚ষন বেপারি বলেন, বাঘার গ্রামে তৈরি প্রাকৃতিক পন্য বিদেশের বাজারে অন্তত ২শ প্রকারের পন্যর চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পাখির বাসা, ফুড বাস্কেট, চা ছাকনি, চুলের ব্যন্ড, কানের দুল, কলমদানি, লুডুস চালনিসহ ১৫টি পন্যর চাহিদা বারোমাস থাকে। এ গুলো আমরা বেশী তৈরি করি। অন্যান্য পন্য তৈরি করা হয় বিদেশিদের দেয়া ক্যাটালগ অনুযায়ি। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ প্রকারের পাখির বাসা রয়েছে। একেকটা পন্য কয়েক রকম আকৃতিতে তৈরি হয়। মূলত এগুলো বিদেশীদের পাঠানো ক্যাটালগ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হয়।
গতকাল (২৭ মে) শনিবার বাঘার গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরে ঘরে পাখির বাসা, ফুড বাস্কেট, চা ছাকনি, চুলের ব্যন্ড, কানের দুল, কলমদানি, লুডুস চালনি তৈরির কাজ চলছে। ঘরের বারান্দা ও বাড়ির আঙিনায় বসে নারী-পুরুষরা মিলে বাঁশ বেত ও পাট দিয়ে– সুনিপুন হাতে এ সব পন্য তৈরির কাজ করছেন।
বিনয় ভ‚ষন বেপারির বাড়ির আঙিনায় গিয়ে দেখা গেল, তিনিসহ ২/৩ জন পুরুষে বাঁশ চিরে দা দিয়ে সুচারু করছেন। পাশে বসে কানন বালা, বাসন্তি রানি বাসা বুননে ব্যস্ত রয়েছেন।
কাজের ফাঁকে বিনয় ভ‚ষন বেপারি বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এসব পন্য তৈরির কাজ করছি। পাখির বাসাসহ প্রায় ২শ প্রকারের পন্য তৈরি করতে পারি। বাঁশ, বেত, পাট, নারকেলের ছোবড়া, খড়, নারকেল পাতা, তাল পাতাসহ নানা উপাদান প্রক্রিয়াজাত করে এ সব পন্য তৈরি করা হয়। যখন যে ধরনের অর্ডার থাকে, তখন সেই ধরনের পন্য তৈরি করা হয়।
বাঁশ বেতের সুনিপুন কারিগর কান্তি রানি বলেন, এ সব পন্য তৈরিতে মজুরি একটু কম হলেও কাজটি বাড়িতে বসে অবসর সময়ে করা যায়। এ কাজ করে মাসে চার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় হয়। এ আয় আমাদের সংসারে বাড়তি সুবিদা এনে দিচ্ছে এটাই আনন্দ।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন শীল বলেন, অজপাড়াগায়ের এই বাসিন্দারা এক সময় বাঁশ বেত শিল্পের উপর ভর করে বেঁচে থাকতেন। কম দামে পাওয়া প্লাষ্টিক পন্যর ব্যাবহার বেড়ে যাওয়ায় বাশঁ বেত দিয়ে তৈরি পন্যর কদর কমে গেছে। যে কারনে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। তবে পাখির বাসাসহ বিভিন্ন পন্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করতে পাড়ায় এ পন্য ও কাজের চাহিদা আবারো বেড়ে যাচ্ছে। তাই অনেকেই বিনয় কাকার হাত ধরে এ পেশায় ফিরছেন। আমরা এটিকে একটি সম্ভাবনময় খাত হিসেবে দেখছি তবে এ খাতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।
বিনয় ভ‚ষন বেপারি বলেন, ৪০ বছর আগে বরিশাল বিসিক থেকে এসব পন্যে তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। এখনো সে কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, বিদেশে ব্রিডিং বার্ড বা পোষা পাখির চাষ হয়। আমাদের দেশের তৈরি পাখির বাসায় ওই পাখি ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফুটায়। যে কারণে বিদেশে পাখির বাসার চাহিদা একটু বেশী। এ ছাড়া ফুড বাস্কেট, চা ছাকনি, চুলের ব্যন্ড, কানের দুল, কলমদানি, লুডুস চালনিসহ ১৫টি পন্যর চাহিদা বারোমাস থাকে। আগে এ সব পন্যর বাজার চীনের দখলে ছিল। সেখানে শ্রমের দাম বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক এ সব পন্য তৈরির উপকরণের সহজলভ্যতা না থাকায় বাজারটি আমরা পেয়েছি। পুঁজি সঙ্কটসহ নানা কারনে আমরা ঠিকমতো এর প্রসার ঘটাতে পারছি না। সরকার সম্ভাবনাময় এ খাতের দিকে নজর দিলে প্রাকৃতিক পন্যর রপ্তানির বাজার আমাদের দখলে আসবে।