অস্তিত্ব হারাতে বসেছে স্বরূপকাঠির বিসিক শিল্প নগরী

হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
ষাটের দশকে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর কোলঘেষে উত্তর কৌরিখাড়ায় গড়ে ওঠে জেলার একমাত্র বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। ১৯৬১ সালে ২৪ দশমিক ৭৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ওই বিসিক শিল্প নগরীর জন্য তৎকালীন ব্যায় ধরা হয়েছিল ৫২ দশমিক ৮৮ লক্ষ টাকা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে সুনামের সাথে ওই বিসিক শিল্প নগরীটি চলে আসলেও বর্তমানে নানা ধরনের অনিয়ম, সংকট এবং অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এই শিল্প নগরীটি। সরেজমিনে ওই শিল্প নগরীতে ঘুরে দেখা যায় এলাকাটি নদীমাতৃক হওয়ার কারনে পন্য আনায়নের জন্য বিসিকের ২৪ দশমিক ৭৪ একর জমির মধ্যে অভ্যন্তরীন খালের জন্য ৩ দশমিক ৭১ একর জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেই জমিতে দুটি খাল কাটা হলেও বর্তমানে খাল দুটিতে অবৈধ দখলদাররা দখল করে কাঠ ব্যাবসা শুরু করেছেন। যার ফলে খাল দুটি দিয়ে বিসিকের ব্যাবসায়ীরা তাদের পন্য সরবরাহ করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। খাল দখলের সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিক ও তথ্য প্রদানকারীদের উপর চড়াও হয় ওই সকল দখলদাররা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে খাল থেকে অবৈধ ইজারা তোলার অভিযোগও। শুধু খাল সংকটই নয় বিসিক এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনের জন্য ৩ দশমিক ৭১ একর জমি বরাদ্ধ থাকলেও যার অধিকাংশই রয়েছে বিভিন্ন দখলদারদের দখলে। যে রাস্তাগুলি আছে তাও চলাচলের জন্য অনুপোযোগী। ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় পানি জমে নানা ধরনের দূর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিসিকের বিভিন্ন চালু কারখানার প্লট বাতিল করে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের নামে প্লট বরাদ্ধ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এখানকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে রাশিদা নকশা এন্ড ফার্নিচারের মালিক সেলিম বাহাদুর বলেন ২০১০ সালে প্লট বরাদ্ধ পেয়ে নিজ খরচে এর জলাশয় ভরাট করে ব্যাবসা শুরু করি কিন্তু মাত্র ১৮ মাসের মাথায় তার সেই প্ল¬ট বাতিল করে অণ্য এক ব্যাক্তির প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্লট ফিরে পেতে তিনি শিল্প মন্ত্রনালয়সহ বিসিকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। প্লট বাতিল হওয়া ইমু গার্মেন্সের মালিক মো. আনিচুর রহমান জানান, তার কারখানায় নানা ধরনের পোষাক উৎপাদনে ১৪ জন নারী শ্রমিক কর্মরত আছে হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়াই তার প্লটকে বাতিল করা হয়েছে। এতে করে তিনিসহ ওই নরী শ্রমিকরা চরম সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। ফারুখ পাপশ ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক ফারুখ হোসেনও একই অভিযোগ করেন। বর্তমানে বিসিকের অধিকাংশ জমিতেই শিল্প কারখানার পরিবর্তে আবাশিক স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাক্তি প্ল¬ট বরাদ্ধ নিয়ে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না তোলে ওই প্লটের উপর চড়া ব্যাংক লোন নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাবসা করছেন। আর এখানকার প্লটে আবাশিক ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন অথবা অন্যের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে অতি দ্রুতই এ শিল্প নগরীটি আবাশিক নগরীতে পরিনত হবে। বিসিকে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি পানির ট্যাংকি নির্মান করা হলেও মটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিকল থাকায় প্রায় ৩০ বছর ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে সুপেয় পানির সংকটে ব্যাবসায়ীরা। এ ব্যাপারে এখানকার শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন সকল অনিয়মের সাথে এখানকার কর্মকর্তারা জড়িত, বিসিক এখানকার ব্যাবসায়ীদের জন্য কোন সুবিধাতো দিচ্ছেই না যেটুকুও দিয়েছে তাও ২২ বছর পর্যন্ত বন্ধ। শুধু প¬ট বরাদ্ধ আর বাতিল করা ছাড়া এখানকার কর্মকর্তাদের যেন আর কোন কাজ নেই। শারমিন রোফ ফ্যাক্টরির ম্যানেজার মো. আলমগীর কবির (তোতা মিয়া) বলেন, পন্য ওঠানামা করার জন্য বিসিকের কোন ঘাট বা জেটি নেই তাই পন্য সরবরাহ করতে তাদের চরম বেগ পোহাতে হয়। বার বার বিসিকের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন সুফল তারা পাননি বলে জানান। কিছু দূর্নীতিবাজদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এখানকার বিসিক শিল্প নগরী এমনটাই দাবী করেন উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিবুল্ল¬াহ। প্রগতি অয়েল মিলের মালিক মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, এখানে কোন পাহারাদার না থাকায় বহিরাগত ও মাদকসেবীদের দৌরাত্বের কারনে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। নিরাপত্তা ও মাদকসেবীদের ব্যাপারে পিরোজপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নেছারাবাদ-কাউখালী সার্কেল) কাজী শাহ নেওয়াজ বলেন মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। মাদকের সাথে যে ব্যাক্তিই জড়িত হবে সে যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে ছাড় দেয়া হবে না। বিসিকের নিরাপত্তা ও মাদকসেবীদের আড্ডা দুর করতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। বিসিকের সকল সংকট ও অনিয়মের সাথে অনেকটাই একমত পোষন করে এখানকার কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন বিসিকে ঘাট, সুপেয় পানি, রাস্তা ও ড্রেনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। প্ল¬ট বরাদ্দ ও বাতিলের কিছু জটিলতা তার পূর্বের কর্মকর্তা সৃষ্টি করে গেছেন বলে তিনি দাবী করেন।