নাহ্! ভুলে যান এ বার। যদি তেষ্টা পায়, পান করুন লেবুর জল। তবে চিনি বাদ দিয়ে। কারণ, দিনে ১০০ মিলিলিটার (সপ্তাহে দু ক্যান) মিষ্টি পানীয় পান করলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ১৮ শতাংশ বেড়ে যায়।

পাঁচ বছর ধরে এক লক্ষ মানুষের উপর করা এক সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে দ্য ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল নামে পত্রিকায়। দেখা গেছে ওই সমীক্ষায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রতি ১ হাজার জনের মধ্যে ২২ জনের ক্যানসার হয়েছে। সমীক্ষায় যে সব ক্যানসার রোগী ছিলেন, তাঁদের স্তন, প্রস্টেট ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের সংখ্যাই বেশি। এই সমীক্ষাটি করেছেন ফরাসি বিজ্ঞানীরা। শুধু মিষ্টি পানীয় পান করাই নয়, ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়তে পারে ডায়াবেটিস থাকলেও। তার সঙ্গে অবধারিত ভাবে থাকছে দেহের ওজন ও স্থূলতা। তবে বিজ্ঞানীরা এখনই একে চূড়ান্ত প্রমাণ বলতে রাজি নন। তা হলেও সতর্ক হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে এই মূল্যবান গবেষণায়।

মিষ্টি পানীয় বলতে কী বোঝাচ্ছেন গবেষকেরা?

যে সব পানীয়ে শতকরা ৫ শতাংশের বেশি চিনি রয়েছে সেগুলো থেকেই দূরে থাকতে বলছেন তাঁরা। কোন্ড ড্রিঙ্ক, ফ্রুট জুস (নো অ্যাডেড সুগার লেখা থাকলেও), মিষ্টি মিল্ক শেক, এনার্জি ড্রিঙ্ক, চিনি দেওয়া চা  কফি—সবগুলোই বিপজ্জনক। এর সবকটা থেকেই ক্যানসারের আশঙ্কা রয়েছে। এই সব পানীয়ের চিনিই শুধু নয়, পানীয়কে আকর্ষণীয়ে দেখতে করার জন্য আরও যে সব উপাদান মেশানো হয়, সেগুলোও সমান ক্ষতিকারক।

এই সমীক্ষা সম্পর্কে  ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর স্ট্যাটিসটিশিয়ান ডঃ গ্রাহাম হুইলার বলেছেন, মিষ্টি পানীয় ও ক্যানসারের মধ্যে সম্পর্ক নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে এই স্টাডি থেকে। কিন্তু আরও গবেষণার দরকার রয়েছে। টিসাইড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ডঃ অ্যামেলিয়া লেক বলেছেন, এই গবেষণা থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা না গেলেও এটা পরিষ্কার যে আমাদের খাবারে চিনি কমাতেই হবে। চিনি অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

চিনি দেওয়া পানীয় ও ক্যানসারের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ প্রমাণের আগে আর একটা বিষয়ও মাথায় রাখতে বলেছে গবেষকরা। সেটা হলো লাইফস্টাইল। দেখা গেছে, যাঁরা মিষ্টি পানীয় বেশি পান করেন, তাঁদের জীবনযাত্রাও বেশি অস্বাস্থ্যকর। তাঁরা চিনির পাশাপাশি নুন, তেল ও ক্যালরি বেশি খান। সুতরাং সেগুলোও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এটা ঠিক যে কীসের থেকে ক্যানসার হয়, তা আজও কার্যত অজানা। বিজ্ঞান ও গবেষণা হয়েই চলেছে দশকের পর দশক ধরে। অনেক সময় বিজ্ঞানীদের একাংশ মজা করে বলেন, ক্যানসার ইজ় ব্যাড লাক। যার কপাল খারাপ, তারই ক্যানসার হয়। তবু এই মারণরোগ সম্পর্কে যেটুকু গবেষণার কাজ হয়েছে, যার থেকে একটা ট্রেন্ড বা প্রবণতা পরিষ্কার । সেটা হলো আমাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ক্যানসারের একটা সরাসরি যোগযোগ রয়েছে। ব্রিটেনের মতো আরও বেশি সংখ্যক দেশ চিনির উপর অতিরিক্ত কর বসালে হয়তো এই সব অস্বাস্থ্যকর, রঙিন ও মিষ্টি পানীয় কিনে পান করার প্রবণতা কমবে।