হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নার্সারীগুলোতে বানিজ্যিকভাবে ফুল ও ফুলের চারার চাষ হচ্ছে । আর এ চাষের প্রসারতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার দাবী করেছেন। সরেজমিনে অলংকারকাঠি এলাকার নার্সারীগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, দুর থেকে সারি সারি হলুদ,লাল,কমলা সাদা রংয়ের দৃষ্টি নন্দন বিভিন্ন প্রজাতির ফুল দেখে মনে হয় যেন দিগন্ত জোড়া রং বেরংয়ের কার্পেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে মাঠের পর মাঠ আর ক্ষেতের পর ক্ষেত। চারদিকে শুধূ ফুল আর ফুল। এর মাঝ দিয়ে একবেকে গেছে স্বরূপকাঠি-বরিশাল-ঢাকা সড়ক। এত ব্যাপক ফুলের সমাহার দেখে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিটি নার্সারীতে প্রচন্ড ভীড় করে । যা সামাল দিতে মালিকদের হিমসিম খেতে হয়। অনেক নার্সারী মালিক লিখে রেখেছেন এই এলাকায় প্রবেশ,ছবি তোলা বা ফুল ছেড়া নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিদিন শত শত ফুল ও চারা নষ্ট করে ফেলে দর্শনার্থীরা। ওই এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক মহিবুল্ল¬াহ বলেন সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা গেলে ওই এলাকাটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিনত হবে। দর্শনার্থী পরশমনি জানান, সুযোগ পেলেই তিনি ওই এলাকায় ছুটে আসেন ওখানকার মনোরম দৃশ্য দেখে মন আর বাড়ি ফিরে যেতে চায়না। উপজেলার অলংকারকাঠি, আকলম, সুলতানপুর, সংগীতকাঠি, পানাউল্লাপুর, আরামকাঠিসহ ১০/১২ টি গ্রামে ফুলের চাষ হচ্ছে। অক্টোবর থেকে ফেব্র“য়ারী মাস পর্যন্ত ফুল চাষের মৌসুম। প্রায় ৬০ বছর পূর্ব থেকে স্বরপকাঠিতে বনজ , ফলদ ও ওষধি চারা কলম উৎপাদন করে বানিজ্যিকভাবে কেনা বেচা চলে আসছে। বিগত দিন থেকে চারা কলমের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ফুল ও ফুলের চারার চাষ চলে আসলেও দিন দিন ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। ফুলের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিগত ৭/৮ বছর ধরে বানিজ্যিকভাবে ফুলের চাষাবাদ করে আসছে এখানকার নার্সারী মালিকরা। এ উপজেলায় প্রায় ২ শতাধিক নার্সারীতে ফুল ও ফুলের চারার চাষাবাদ হচ্ছে। আর এতে কর্মরত আছেন প্রায় ২ হাজার শ্রমিক। এ সব নার্সারীতে ডালিয়া, কসমস, সালবিয়া, ষ্টার, জিনিয়া, সূর্যমুখী, ক্যাপসিক্যাপ, ক্যাবিষ্ট, গ্যাজোনিয়া, ক্যারোনডোনা, স্যালোসিয়া, রজনীগন্ধ্যা, গ্যালোডিয়া, নয়নতারা, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকাগাঁদা,স্নুবল, গোলাপসহ নানান প্রজাতির ফুলের চাষ হচ্ছে । ফুল চাষ করে এসব গ্রামের অনেকেই আজ স্বাবলম্বী । ফুল ও ফুল চারা চাষাবাদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ৩ হাজার শ্রমজীবি মানুষ জড়িত থেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এক শ্রেনির দুরাগত পাইকাররা ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতিদিন এখান থেকে নানা জাতের ফুলসহ চারা ক্রয় করে পিকআপ ভ্যান, ট্রলার, নৌকা যোগে ভোলা,পটুয়াখালী,বরগুনা,ঝালকাঠি ,ফরিদপুর,বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত আদর্শ নার্সারীর মালিক মো. আব্দুস সালাম হাওলাদার কালেরকন্ঠকে জানান,এসব নার্সারী থেকে প্রতিমাসে গড়ে আনুমানিক ৪/৫ লাখ টাকার ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হয়। চলতি মৌসুমে ২/৩ কোটি টাকার ফুল চারা এবং ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন নার্সারী মালিকেরা। ছারছীনা নার্সারীর মালিক মো. জাহিদ হোসেন পলাশ জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও ফুল ও চারা নিতে আসেন বর্তমানে নার্সারীতে প্রায় ২৫/৩০ প্রজাতির ফুলের চারার চাষ হয় এর মধ্যে গাঁদা, চন্দ্রমল্লি¬কা ও গোলাপ ফুলের চাহিদা বেশি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও জাতীয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। বৈশাখী নার্সারীর মালিক মো. শাহাদত হোসেন জানান, ফুল চাষের জন্য যশোর,বগুড়া থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বীজ ও চারা আমদানি করা হয়। তবে সকল ব্যবসায়ীরা আরও বলেন এ ব্যবসার পুজির জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে লোন নিতে হয় তাদের । ফুলের চাষাবাদকে আরো প্রসারিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ সুদমুক্ত ব্যাংক লোন প্রদানের দাবি নার্সারী মালিকদের। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিফাত সিকদার জানান ফুল চাষে তেমন কোন সহয়তা প্রদান না করা হলেও প্রযুক্তিগত কিছু পরামর্শ দেয়া হয়।