যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে চাই না-শেখ হাসিনা

সবুজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক//
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘প্রহসনের নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টার অভিযোগ করলেও শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই যে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে হবে। জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ। যদি না পারি কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু দেশে শান্তি বজায় থাকুক।
আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে তার সরকার পছন্দ করে নিক। সেই পরিবেশটা বজায় থাকুক, আমি সেটাই চাই। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা থাকলে দেশটা এগিয়ে যাবে।
আমি অনেক কিছু সহ্য করেও সবার সঙ্গে বসে কথা বলেছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। সবাইকে বলেছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। আমরা চাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক।
তিনি বলেন, তার পরও আমি বলব, আজকে এতগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা কোনো দিক বাদ রাখিনি। অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। সেটা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করব, এই সুযোগ আমি দেশবাসীদের কাছে চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার আরেকবার সুযোগ দিন, আমরা উন্নয়নের কাজগুলো যেন শেষ করতে পারি। যদিও এর কোনো শেষ নেই। উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে, তবুও যে কাজগুলো হাতে নিয়েছি, তা যেন শেষ করতে পারি, এটাই আমি চাই।
বাংলাদেশ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থানটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে গেলে সুইাজারল্যান্ডকে ব্যবহার করতে হয়। একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকেই সেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশটাকেও সেইভাবেই গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু তার জন্য একটা অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন। আর সেই উন্নয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আর প্রতেবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটা যোগাযোগ ও সদ্ভাব সৃষ্টি করা, সেটাও আমরা খুব সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মেটানো ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নেরও কথা উল্লেখ করেন তিনি।সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব, যাতে আমাদের সমাজে শান্তি ফিরে আসে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। ভাগ্য গড়তে এসেছি, বাংলার জনগণের। সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাটাই আমার লক্ষ্য। অনেকেই বলে, আপনি সারা দিন-রাত এত পরিশ্রম করেন কেন? আমার বাবা এ দেশটা স্বাধীন করে দিয়েছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটা তিনি করতে পারেননি। তার সেই অসামপ্ত কাজটা শেষ করা দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি, কর্তব্য হিসেবে নিয়েছি।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইসিসির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাত কবীর, সাবেক সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সোনিয়া বশীর কবির, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ।