দেশি বিদেশি দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান

হযরত আলী হিরু, আটঘর কুরিয়ানা থেকে ফিরে ।।
দেশি বিদেশি দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস ভাড়া করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে ওই এলাকায়। সপ্তাহের শুক্রবার দর্শনার্থীদের ভীড় বেশি হয়। এখানে এসে তারা ট্রলার অথবা নৌকা ভাড়া করে তাতে করে পেয়ারা বাগানে ঘুরে বেড়ায়। এসময় মাইক, সাউন্ডবক্স বাজিয়ে আনন্দ উল¬াস আর হৈ হুলে¬াড়ে মেতে উঠেন তারা। বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীদের মধ্যে স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরাই বেশি। কিন্তু বিশ্রাম বা থাকার কোন ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীদের ভ্রমন সংক্ষিপ্ত করে আকাংক্ষা নিয়ে ফিরে যেতে হয়। এ ব্যাপারে সিলেট থেকে আসা দর্শনার্থী রাজু আহম্মেদ জানান, এলাকাটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর এক দিকে যেমন পেয়ারার বাগান অন্যদিকে নদীতে নৌকায় পেয়ারার ভাসমান হাট পুরো বিষয়টি উপভোগ করতে ২/৩ দিন লাগত কিন্তু থাকার কোন ব্যাবস্থা নেই বলে আফসোস নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে। সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব সীমান্তে ওই এলাকাটির অবস্থান। যে এলাকার প্রায় শতভাগ মানুষ পেয়ারা,আমড়া,বোম্বাই মরিচ সহ বিভিন্ন চাষের সঙ্গে জড়িত। বাংলার আপেল বলে খ্যাত পেয়ারা আটঘর-কুড়িয়ানার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। শুধু কৃষিই নয় শিক্ষাদীক্ষার দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ নামে বিশ্বে একমাত্র কলেজ এই কুড়িয়ানাতেই। উপজেলা কৃর্ষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী স্বরূপকাঠি উপজেলায় ৩৪ টি গ্রামে ৬৫৫ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২৫ টি বাগান, পেয়ারা চাষীর পরিবার রয়েছে ১ হাজার ২৫০ টি। প্রতি হেক্টরে বছরে ৯ থেকে ১০ মেট্রিকটন পেয়ারা ফলে। প্রতিদিন হাজার হাজার মন পেয়ারা নৌকায় করে ভাসমান বাজারে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রী করেন চাষীরা। ব্যাবসায়ীরা তাদের কেনা পেয়ারা জুড়ি,প্লাস্টিকের বাস্কেট (ব্যবসায়ীদের ভাষায় ক্যারেট) এবং পাতলা কাঠ দিয়ে তৈরি বাক্স করে লঞ্চ ও ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাগানে ফল ফুলের সমাহার দেখে চাষীদের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু চাহিদা মত মূল্য না পাওয়ায় তাদের সকল আনন্দ ¤¬¬ান হয়ে যায়। এমনকি কমমূল্যের কষ্টে এক চাষী তার পেয়ারা বোজাই নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনা ও ঘটেছে। ব্যাবসায়ী মো. কবির হোসেন জানান, বার বার যানবাহন পরিবর্তন করে বর্তমানে পেয়ারা ঢাকায় পৌছাতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টা। এতেকরে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পেয়ারার আসল স্বাদ ও মন কাড়া গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চাষীদেরও চড়া মূল্য দেয়া যাচ্ছে না পাশাপাশি অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের। পেয়ারা চাষী আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার জানান, বাংলার আপেল খ্যাত অর্থকারী এ ফলটি শত বছর পূর্ব থেকে পুষ্টির যোগান দিলেও আজবদি তা সংরক্ষন বা প্রকিৃয়াজাত করনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. আখতারুজ্জামান খান কবির এই এলাকায় পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভা করেন। এসময় আমরা তার কাছে এই এলাকাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনার দাবী জানানোর পাশাপাশি এখানে একটি রেষ্ট হাউস নির্মানের দাবী জানিয়েছি। নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ জানান, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে ওই এলাকায় একটি রেষ্ট হাউস নির্মানের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং পর্যটকদের সুবিদার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।