বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসি তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন

মো: মাসুম বিল্লাহ//
তারেক২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাগুলোর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারন করেন।
প্রথমিকভাবে ১৭ জনের যাবজ্জীবন ও ২০ জনের ফাঁসির কথা শোনা যায়। কিন্তু এডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল নিশ্চিত করে জানান, তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
২১ আগস্ট মামলায় রায়ের দিন নির্ধারণ করার আগে মামলাটিতে জামিনে থাকা ৮ আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। জামিন বাতিল হওয়া ৮ আসামি হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির ৩ তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শাওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।
পলাতক ১৮ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, সবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, শফিকুর রহমান, আব্দুল হাই ও বাবু ওরফে বাতুল বাবু।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ২০০৯ সালের ০৩ আগস্ট রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ০৩ জুলাই অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমাসসহ আরো ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ফলে মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার পর ফের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সব মিলিয়ে মামলার রাষ্ট্র পক্ষের মোট ৫১১ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২৫ জন সাক্ষী। গত ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে আসামি পক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে এ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।