পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামীলীগে গ্রুপিং বিএনপি চায় নিজ দলীয় প্রার্থী

হযরত আলী হিরু,পিরোজপুর ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে পিরোজপুরের রাজনৈতিক মাঠ। ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলায় আসন সংখ্যা ৩টি। এর মধ্যে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ বাংলাদেশ-১২৭ সংসদীয় এ আসনটি রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক দিক বিবেচনায় অতি গুরুত্বপূর্ন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), বিএনপি, জাতীয়পার্টি (জাফর) ও জামায়াতের প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন লাভে লবিং, গ্র“পিং, গনসংযোগ এবং কেন্দ্রে হাইকমান্ডের কাছে ধর্না দিতে শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি কেউই পিছিয়ে নেই। এ আসনে বর্তমানে রয়েছে ২ টি পৌরসভা ও ২৬ টি ইউনিয়ন, মোট ভোটর সংখ্যা ৪১৪৮১৭ । এত ভোটারের নির্বাচনী এলাকা পুরো দক্ষিনাঞ্চলে আর একটিও নেই। এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আ.লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল। তার কর্মকান্ডে এলাকায় নানা ধরনের বিতর্ক ও দলীয় ত্যাগি নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করা এবং সংসদ সদস্যর সাথে তার অন্য ভাইদের বিরোধের কারনে এখানকার আ.লীগে চরম গ্র“পিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কয়েকদিন পূর্বে একটি জাহাজকে কেন্দ্র করে এমপি ও তার ক্যাডারদের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ায় বর্তমানে বেশ ইমেজ সংকটে রয়েছেন তিনি। তাই নির্বাচনে জয়লাভের জন্য জনপ্রিয় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুজছে আ.লীগ। এদিকে এ আসনে জামায়াত বা জোটের অন্য কোন দলকে নির্বাচনে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। নিজ দলীয় প্রার্থী দাবী তাদের।
আওয়ামীলীগ ঃ
বর্তমানে এখানকার আ.লীগে দেখা দিয়েছে বিভক্তি মতানৈক্য আর গ্র“পিং যা নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন তৃনমূলের নেতা কর্মীরাও। আর এর খেশারত গুনতে হতে পারে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৎকালীন জেলা আ.লীগের সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট সুধাংশু শেখর হালদার। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট সুধাংশু শেখর হালদারকে পরাজিত করে জামায়াতের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি) এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অভিযোগ আছে পিরোজপুর ১ আসনটি আওয়ামীলীগের হওয়া সত্ত্বেও এ সময় দলের প্রভাবশালী নেতৃত্ত্ব দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বিরোধিতা করায় আসনটি হারায় আওয়ামীলীগ। এরপর সুধাংশু শেখর হালদার মারা যাওয়ার পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে মনোনয়ন দেয়া হয় । তিনি নৌকা নয় নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করলে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন বর্তমান এমপি আউয়াল। এ নির্বাচনে জামায়াত ইসলামী দলের হাত থেকে নৌকা উদ্ধারের স¦ার্থে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হন সকল নেতাকর্মী। আর নৌকার জয়ের সঙ্গে জয়ী হন এমপি আউয়াল। এ জয়ের ফলে জেলায় তার একক আধিপত্য আরও বৃদ্ধিপায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে পিরোজপুরের আসন বিন্যাস করা হয়। এতে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ আসন থেকে ইন্দুরকানিকে বাদ দিয়ে পিরোজপুর-২ থেকে আলাদা করে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলাকে পিরোজপুর-১ আসনে যুক্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে বের হয়ে জাতীয় পার্টি (জাফর) যোগ দিয়ে নির্বাচন বর্জন করেন মোস্তফা জামাল হায়দার। এতে দ্বিতীয়বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় পুনরায় এমপি হন একেএমএ আউয়াল। দিনে দিনে সংসদ সদস্যের একক আধিপত্যর কারনে দলের নেতাকর্মিদের ভিতরে চরম অসষ্ণোস দেখা দেয়। দীর্ঘ আট বছরের মাথায় তার দুর্নীতি আর অনিয়মের খতিয়ান উল্লেখ করে জেলার দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে বেকুটিয়া ফেরি ঘাটের ও বলেশ্বর ব্রীজের টোল আদায়ের ইজারা নিয়ে সংসদ সদস্যর মেঝ ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। এসময় মালেকের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একাধীক সভা সমাবেশে প্রকাশ্যে বিদ্রোহো ঘোষনা করে তার সেজ ভাই পিরোজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান খালেক ও পিরোজপুর চেম্বার এন্ড কমার্সের এবং পিরোজপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মশিউর রহমান মাহারাজ। ধীরে ধীরে জেলা ছাত্রলীগের সমস্ত নেতা কর্মীসহ দলের সিংহভাগ নেতাকর্মিরা পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের পক্ষে অবস্থান নেয়। পরে মজিবুর রহমান খালেক আবার সংসদ সদস্যর গ্র“পে যোগ দেন। ফলে পিরোজপুরের রাজনীতিতে দুটি গ্র“পের সৃষ্টি হয়। যার একটি গ্র“পে জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাষক অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শ. ম রেজাউল করিম, জেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জেলা আ.লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না, জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা গোলাম হায়দার ও চন্ডি চরন পাল এক ব্যানারে সভা সমাবেশ করে নেতাকর্মিদের ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দলের অধীকাংশ নেতা কর্মী রয়েছেন এই ব্যানারে। অন্যদিকে দলের সভাপতি এমপি একেএমএ আউয়ালের সাথে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান খালেক দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু সহ কিছু অংশ নেতা কর্মি আলাদা ভাবে দলীয় সভা সমাবেশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন। এতে করে সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালের দীর্ঘ ২০ বছরের ও বেশি সময় ধরে পিরোজপুর জেলা আ.লীগের রাজনীতিতে একক আধিপত্য হাত ছাড়া হতে থাকে । এক পর্যায়ে পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুরে সংসদ সদস্যের অবস্থান সুবিধাজনক স্থানে না থাকায় এক সময় তার রাজনীতি হয়ে ওঠে স্বরূপকাঠি কেন্দ্রিক। স্বরূপকাঠিতে সংসদ সদস্যের অনুসারি হাইব্রিড আ.লীগ নেতাদের কারনে ত্যাগি আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এরমধ্যে গত ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমকে পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রশাষক নিয়োগ দিলে সেখানকার রাজনীতি পাল্টে যায়। অধ্যক্ষ শাহ আলমের নেতৃত্বে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ওখানকার আ.লীগ। ওই বছরই ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনে আ.লীগের মনোনয়নে আনারশ প্রতীকে নির্বাচন করেন অধ্যক্ষ শাহ আলম। কিন্তু সে নির্বাচনেও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের মতো দলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে দলীয় প্রার্থীকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তিতে হাবিবুর রহমান মালেক, অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, হাকিম হাওলাদার ও ইসহাক আলী খান পান্না তাদের অনুসারি সকল নেতাকর্মিকে নিয়ে জেলার সকল উপজেলায় সভা সমাবেশ করলে জেলার রাজনীতিতে তাদের একটি শক্ত অবস্থান সৃষ্টি হয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, কেন্দ্রিয় আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি শ.ম. রেজাউল করিম, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মালেক, মুক্তিযুদ্ধের অণ্যতম সংগঠক ও সাবেক এমএনএ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত এনায়েত খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বঙ্গবন্ধুর চাচাত ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী শেখ এ্যানি রহমান, জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা লীগের সভাপতি মো. গোলাম হায়দার, কেন্দ্রিয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আজম খান ।
দলীয় বিভেদ এবং বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে এম পি এ কে এম এ আউয়াল বলেন, দলে কোন বিভেদ নেই। নিন্দুকেরা নানা কথা বলছে। আমি জেলা আ.লীগের সভাপতি। সভাপতি ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আমার বিশ^াস অবিচল। ইনশাআল্লাহ মনোনয়ন আমিই পাবো।
পিরোজপুর ২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আ.লীগের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ শাহ্ আলম বলেন, এমপি আউয়ালের কারনে দলে গ্র“পিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন উপেক্ষা করে আমার বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নানা অপ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাকে বিজয়ী করেন। এছাড়াও গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে হারিয়েছে। নেত্রীর হাতে সারাদেশের আ.লীগের নেতাকর্মিদের আমলনামা আছে তিনি যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেয় তাহলে এ আসনে নৌকার বিজয় অর্জন করতে পারব ।
পৌর মেয়র ও জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জেলা আ.লীগকে আমিই সংগঠিত করেছিলাম। দীর্ঘ বছর জেলা আওয়ামীলীগের দ্বায়ীত্বশীল পদ দখল না করে দলীয় সকল কর্মসূচিতে অকুণ্ঠ সহযোগীতা দিয়েছি। দলীয় নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে বুক দিয়ে আগলে রেখেছি। আজ যখন ভাই (এমপি) দলের নেতাকর্মী ও জনগনের আস্থা হারিয়েছে তখন আবার জনগন আর আ.লীগের হাল ধরেছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।
আইনজীবী শ.ম রেজাউল করিম বলেন, পিরোজপুর -১ আসনের বহু নেতাকর্মীরা রাহু মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। তাদের দাবি রক্ষা আর দলীয় সম্প্রীতি ও গণমানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেত্রী আমাকে বা অন্য যাকেই মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক কাজ করব।
শেখ এ্যানি রহমান বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে তার সম্মতিক্রমেই পিরোজপুরের এসেছি। আমার বাবা এখানকার এমপি ছিলেন তার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করে পিরোজপুরকে সোনার পিরোজপুরে রুপান্তরিত করাই আমার লক্ষ।
গোলাম হায়দার বলেন, পিরোজপুরে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন চাচ্ছেন আমিই তাদের মধ্যে বর্ষিয়ান। জীবনের দীর্ঘসময় দলের পক্ষে সকল সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আমার আস্থা আছে। আমি আশাবাদি তিনি ত্যাগী নেতা হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, পিরোজপুরের রাজনীতিতে বর্তমানে যে গ্র“পিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে মিটিয়ে সকল নেতাকর্মিদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এ আসনে বিজয়ী হয়ে তাকে উপহার দিতে পারব।
একেএম আজম খান বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমি সকল নেতাকর্মিকে ঐক্যবদ্ধ করে এ আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারব। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারনী তৃনমূলের ভোটে তৎকালীন সংসদীয় আসনে আমি দ্বিতীয় হয়েছিলাম।
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এখানকার আ.লীগের গ্র“পিংয়ের কারনে নেতাদের মধ্যে চরম বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে এমতাবস্থায় আ.লীগের প্রার্থীদের দিয়ে নির্বাচন করা অনেকটা ঝুকিপূন। আমাকে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী করা হলে আমি সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে মহাজোটের বিজয় নিশ্চিত করতে পারব। এছাড়া জাতীয়পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে আমিই জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন পাব।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে যতক্ষন মনোনয়ন নিশ্চিত না হচ্ছে ততক্ষন স্বস্তি নাই কারও মনে। তাই বেশীর ভাগ নেতাকর্মী আছেন হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
বিএনপি ঃ
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহন এখনো নিশ্চিত না হলেও মনোনয়ন পাওয়ার আশার বিএনপির প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী নানান ভাবে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। ১৯৭৮ সালে জেলা বিএনপি গঠনের পর থেকে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে এক বার ডাক্তার রুস্তম আলী ফরাজি বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া জেলার তিনটি আসনের একটিতেও বিএনপি থেকে কেউ নির্বাচিত হতে পারেনি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট থেকে পর পর দু’বার জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে মনোনয়ন দেয়ায় বিএনপির ভাগ্যে মনোনয়ন জোটেনি। কানা ঘুষা চলছে আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় ঐক্যজোট থেকে পিরোজপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত হতে পারেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার অথবা জামায়াতের শামীম বিন সাঈদী। এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা সদর আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে জোটের অন্য দলের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে তৃণমূল থেকে উঠে আসা বিএনপির নেতাকর্মিরা উৎসাহ ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। পিরোজপুর-১ আসন দীর্ঘ বছর বিএনপির হাতছাড়া থাকায় ইতিমধ্যে দলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে এই আসন নেত্রীর হাতে তুলে দিতে পারবো।
অপর দিকে জেলা বিএনপির সদস্য অবসর প্রাপ্ত মেজর ব্যারিষ্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যান্ত দূর্বল। দলের ভেতর থেকে সিনিয়র কয়েকজন আওয়ামীলীগের মুখপাত্র হয়ে কাজ করছেন। গত হরতালে শেখ হাসিনার কুশপত্তলিকা দাহ করার মামলায় দীর্ঘ ছয় মাস কারা ভোগ করেছি। বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে উপস্থিত হয়ে দলের সার্থে কথা বলার চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে আমিও মনোননয়ন প্রত্যাশা করি।
জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ফখরুল আলম বলেন, এ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে নেছারাবাদ উপজেলায় ভোটার বেশি আমার বাড়ি নেছারাবাদ উপজেলায় এদিক বিবেচনায় আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করি।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল পিরোজপুরের যে কোন একটি আসন থেকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এলিজা জামানও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ ব্যাপারে ২০ দলীয় শরিক দল জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী শামিম বিন সাইদী বলেন, আমার আব্বা এখানকার এমপি ছিলেন তিনি যে আধুনিক ও সন্ত্রাসমুক্ত পিরোজপুর গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা বাস্তবায়ন করাই আমার প্রধান লক্ষ। এক্ষেত্রে আমি জামায়াত মনোনীত জোট সমর্থিত প্রার্থীতা প্রত্যাশা করি। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অপরদিকে এখানকার বিএনপির নেতাদের দাবি পিরোজপুর-১ আসনে দলের যোগ্যতা যাচাই করে বিএনপি থেকেই মনোনয়ন দেয়া হোক।