উজিরপুরে আওয়ামীলীগের জল্লা ইউপি চেয়ারম্যান নান্টুকে গুলি হরে হত্যা

গৌরনদী প্রতিনিধি//
শুক্রবার বাতে (২১ সেপ্টেম্বর) বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু (৪০)কে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা গুলি করে হত্যা করেছে। ওইদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার কারফা বাজারের একটি তৈরী পোশাকের দোকানের ভেতরে ঢুকে অজ্ঞাতনামা দুই বন্দুকধারী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্ধ্যাদের দেয়া বর্ননা ও থানা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু ওই বাজারের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী পোশাকের দেকানটিতে বসে ছিলেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে বাজারের পূর্বদিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পড়া তিন বন্ধুকধারী হঠাৎ এসে দোকানের সামনে নামে। তাদের একজন মোটরসাইকেলটি নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। বাকী ২জন বন্ধুকধারী দ্রুত দোকানটির ভেতরে ঢুকে চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে ৫রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু ও তাঁর সহযোগী কারফা গ্রামের নিহার হালদার গুলিবিদ্ধ হন। মুহুর্তের মধ্যেই ওই তিন বন্ধুকধারী সেখান থেকে বেড়িয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে একই পথ ধরে বীরদর্পে মোটরসাইকেলটি যোগে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন ও স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তখন তার অবস্থা বে-গতিক দেখে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগন দ্রুত তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন এবং তার সহযোগী অপর গুলিবিদ্ধ নিহার হালদারকে আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ ইফাদ আহমেদ রাত পৌনে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর দিকে অবস্থা ক্রমেই খারাপ হওয়ায় আহত নিহার হালদারকেও ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার অবস্থা এখনও আসংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকগন।
নিহতের স্বজনরা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের ব্যাক্তিগত সহকারী আবু সাঈদ, জল্লা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন শাহ, ছাত্রলীগ কর্মী রাব্বি, টিটু, জল্লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ, তার ছেলে অচিন্ত বাড়ৈ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ইকবাল বেপারী, শোলক ইউপি চেয়ারম্যান কবির কাজী এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।
উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা হাফিজুর রহমান ইকবাল জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের ব্যাক্তিগত সহকারী আবু সাঈদ, জল্লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ, শোলক ইউপি চেয়ারম্যান কবির কাজী এ হত্যাকান্ডের নেপথ্য কুশিলব।
স্থানীয় বাসিন্ধা জগদিশ হালদার, ইউপি সদস্য সবিতা বাড়ৈ, নাসিমা বেগম, সাবেক ইউপি সদস্য ঝর্না রানী নারী উদ্যোক্তা মনিকা বৈদ্য দাবী করেন, হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেয়া হোক। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমাদের হিন্দু নেতাদের নিধন করা হচ্ছে। এদেশে থাকার আর কোন নিরাপত্তা নেই। আমরা ভারতের কাছে আশ্রয় চাই।
তারা আরো জানান, এ উপজেলায় আওয়ামীলীগের বিবধমান দুটি গ্রুপের দ্বন্দের জেরে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে স্থানীয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ ওই রাতেই এলাকায় বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দাবী করে বাজারের ব্যবসায়ী পান ব্যবসায়ী হরষিত রায়ের দোকান ও সোহাগ সরদারের মার্কেটের ৩টি দোকান ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট করে।
অপরদিকে গতকাল শনিবার সকালে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ বাজারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্দ নারী-পুরুষ মিলে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)র একটি গাড়ী ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ মৃদু লাঠি চার্জ করলে শংকর ভাংড়া নামে দশম শ্রেনীর এক ছাত্র আহত হয়। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে নিকুঞ্জ বালা পলাশ ও ননী গোপাল নামের দুই সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। তাদেরকে বিভিন্ন স্থানীয় ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা তাদের অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও বিক্ষেভের ছবি তুলতে সাংবাদিকেদের বাঁধা দেয়। বাঁধা উপেক্ষা করে ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। দুপুর দেরটার দিকে বিক্ষোভের ছবি তুলতে গেলে বিক্ষোভকারী একদল নারী গৌরনদী প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধি এম আলমের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়দের সহয়তায় ক্যামেরাটি উদ্ধার করা হয়। এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বাজার সংলগ্ন সোগাগ সরদারের বিশাল একটি ৫তলা বানিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা ৫তলা ওই ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেখানে পুলিশ বাহিনী ও র্যাবের কয়েকশত সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ না থাকায় তারা কোন প্রকার প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। আগুন নেভাতে এক পর্যায়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে উজিরপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি টীম সেখানে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্দ জনতা সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌছুতে পারেনি। এক পর্যায়ে আগুন না নিভিয়েই ফায়ার সার্ভিস সেখান থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এতে ভবন মালিকের ফ্লাটের মালামালসহ ওই ভবনে থাকা একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়ার ফ্লাটের গৃহ সামগ্রী ও মালামাল সম্পূর্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল জানান, এ হত্যাকান্ডের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যে সাবেক ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম পান্না, বাজারের পান ব্যবসায়ী হরষিত রায় এবং ওই এলাকার আইযুব আলী ফরাজীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।