কমলগঞ্জে রোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে দুই ভাই বোন

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ সংবাদদাতা//
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিলকপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফকরুল ইসলাম আফরুজ ও মাতা শিরী বেগমের সন্তান আঠারো বছর বয়সের সিরাজুছ ছালেকিন ও পনের বছর বয়সের আবেদা আক্তার রিমা। এ পরিবারে জন্ম নেয়া ভাইবোন গত এক যুগ ধরে অজ্ঞাত রোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে। অভাবের তাড়নায় আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি বলেন তাদের পিতা মাতা।দরিদ্র কৃষক ফকরুল ইসলাম আফরুজ জানান, জন্মের তিন বছর পর থেকে ভাই বোন উভয়েই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের পর চোখের সামনে ছেলে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাদের বাবা ফকরুল ইসলাম গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। ক্রমাগত সিরাজুছ ছালেকিনের মুখমন্ডল ও শরীরে রোগটি বেড়ে মারাতœক রূপ ধারন করে। আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের বাইরে বের হওয়া কষ্টসাধ্য। দু’জনের কেউই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। দীর্ঘ প্রায় বার বছর যাবত তাঁরা এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অসহায় বাবা ফকরুল ইসলাম আধুনিক কোনো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। একদিকে রোগের যন্ত্রনা অন্যদিকে সংসারের অনটন। এভাবে চিকিৎসার অভাবে যেন তাঁরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ২য় সিরাজুছ ও ৩য় রিমা। ছয় জনের মধ্যে দু’জনই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত। অন্যেরা সুস্থ্য। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা পঞ্চাশোর্ধ বয়সের ফকরুল ইসলাম কৃষিকাজ করে ৮ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পায়নি এই অসহায় পরিবার।
সিরাজুছের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখা দিলেও পরে তা মারাতœক রূপ ধারন করে এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। রিমার শরীরে ও মুখে প্রথমে কিছু সাদা সাদা দেখা দেয় ও পরে পুরো মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। স্থানীয়দের পরার্মশে পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা সঠিক রোগটি সনাক্ত করতে না পারায় এবং সুনিদিষ্ট কিছু না বলায় রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বাবা ফকরুল ইসলাম। কান্না জড়িত কন্ঠে ফকরুল ইসলাম বলেন, ছেলে মেয়েদের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাধা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। নিজের চোঁখের সামনে ছেলে মেয়ের আর্তনাদ দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক সৈয়দ শওকত আলী জানান, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়। ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে ডিএনএ নষ্ট হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারনা করছেন রোগটি ঢবৎড়ফবৎসধ চরমসবহঃড়ংধস হতে পারে। এটি একটি বিরল ধরনের রোগ। ছেলে ও মেয়েকে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
তবে রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়ের বাবা সরকারের কাছে চিকিৎসার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এসে যদি এই অসহায় ভাই-বোনের চিকিৎসার ভার নেন তাহলে হয়তো নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে রোগাক্রান্ত ছালেকিন ও রিমা।