দেশি বিদেশী পর্যটকে মুখরিত স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান

হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর ॥
দেশি বিদেশেী পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান এলাকা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা জায়,উপজেলা সদর থেকে মাত্র প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ওই ইউনিয়নের ৩২ টি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ২০৭০ টি পরিবার এই পেয়ারা টাষের সাথে জড়িত। সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সরু সরু খালের দুপাড়ে দৃষ্টি নন্দন সারি সারি পেয়ার বাগান দেখে পর্যটকদের মন জুড়িয়ে যায়। বিগত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে পেয়ারা বাগানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরুন তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সের ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীরা লঞ্চ, বাস ও মাইক্রোবাস সহ নানা বাহনে করে এই এলাকায় ঘুরতে আসছে। এথানে এসে বাগানের ভিতর যাবার জন্য তারা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার অথবা নৌকা ভাড়া করে তাতে চড়ে ঘুরে বেড়ান। শুধু পেয়ারা বাগানেরই নয় এখানকার ছোটবড় মিলিয়ে ১০ টি খালে নৌকায় করে পেয়ারার হাট বসে হাজার হাজার টন পেয়ারা বিক্রি হয় । পেয়ারা ব্যাবসায়ী রাসেল জোমদ্দার জানান, তারা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাবসায়ীরা এখান থেকে পেয়ারা ক্রয় করে লঞ্চ, ট্রাক যোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকে। এসব দেখতে দুর দুরান্ত থেকে আসা প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভীড়ে সরগরম থাকে কুড়িয়ানা। গ্রামীন জনপদে বিনোদন প্রেমিদের জন্য মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পেয়ারা বাগান দিন দিন পরিনত হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকদের মতে,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পেয়ারা বাগান এলকায় গড়ে উঠতে পারে অপার সম্ভবনাময় পর্যটন কেন্দ্র এবং সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমান রাজস্ব। পেয়ারার মৌসুমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ঢাকাসহ দুর দুরান্তের নানা বয়সী ভ্রমন পিপাসু অসংখ্য দর্শনার্থী ভীড় জমান। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি এ পেয়ারা বাগানে বিদেশী পর্যটকরাও আসছেন। দর্শনার্থীদের আনন্দ উল্ল¬াস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা এলাকা থাকে মুখরিত। পর্যটকবাহি ট্রলারে ট্রলারে সয়লাব হয়ে যায় পেয়ারা বাগান এলাকার খালগুলো। স্থানীয়দের সুত্র জানায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভীড় করলেও এখানে নেই কোন বিশ্রামাগার নেই কোন ভাল মানসম্মত খাবারের দোকান। নেই কোন শৌচাগার। আদমকাঠি এলাকার ৫ জন উচ্চ শিক্ষিত তরুন ৩ একর পেয়ারা বাগান লিজ নিয়ে পেয়ারা পার্ক নামে একটি মিনি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন এ বছর । পার্কের পরিচালক অতনু হালদার জানান সহনীয় পর্যায়ে খরচের মাধ্যমে পর্যটকদের বিনোদন সহায়তার পাশাপাশি বেকারত্ব দুর করাই তাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অটঘর কুড়িয়ানাতে গত বছর সফরকালে আদমকাঠিতে একটি বিশ্রামাগার ও হোটেল নির্মানের জন্য স্থান নির্বাচন করেন। এ লক্ষ্যে খসড়া প্লান তৈরিও করা হয়েছিল। কিন্তু চাহিদামত জমি না পাওয়ায় বিশ্রামাগার ও হোটেল নির্মান করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ জানান যেখানে স্থান নির্ধারন করা হয়েছিল সেখানে চাহিদামত জমি নেই বিধায় অন্যত্র জমি খোজা হচ্ছে। খুব শীঘ্র জমির ব্যবস্থা হবে বলে তিনি আশাবাদী । জমির ব্যাপারে আটঘর এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও অব: শিক্ষক মো. সরোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান সরকার যদি পর্যটন কেন্দ্রের জন্য আটঘরকে নির্বাচন করে তাহলে এখানে প্রয়োজনীয় জমির ব্যাবস্থা করা যাবে এবং চারদিক থেকে যোগাযোগ ব্যাবস্থা থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরা সহজেই এখানে আসতে পারবে।
পেয়ারা বাগানে আসবেন যেভাবেঃ ঢাকার সদর ঘাট থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল।বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে নেমে মাহিন্দ্রতে সরাসরি আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে। ঢাকার সদর ঘাট থেকে লঞ্চযোগে স্বরূপকাঠির ছারছিনা লঞ্চঘাট । লঞ্চঘাট ঘাট থেকে নেমে ইঞ্জিত চালিত ট্রলারে বা অটো রিক্সায় আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে। সায়দাবাদ, গাবতলী বাসষ্ট্যান্ট থেকে বাসে সরাসরি স্বরূপকাঠি। সেখান থেকে ইঞ্জিত চালিত ট্রলারে বা অটো রিক্সায় আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে।