গৌরনদীতে মাদক-জুয়াড়ী চক্র ও প্রতিবাদী যুবকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা আহত ৭

গৌরনদী প্রতিনিধি//
সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে বরিশালের গৌরনদীতে সংঘবদ্ধ একটি মাদক ও জুয়াড়ী চক্র এবং স্থানীয় প্রতিবাদী যুবকদের মধ্যে দুইদফা হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ২জনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রাতের ঘটনার পর স্থানীয় এক নারী পৌর কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ মাদক ও জুয়াড়ী চক্র প্রতিবাদী যুবকদের দলনেতার বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধরের হুমকি দেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দু’পক্ষই ছিল মুখোমুখী অবস্থানে। ফলে যে কোন সময়ে আবারো ঘটতে পারে ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ একাধিক জীবনহানির মত মারাতœক কোন অঘটন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, দীঘদিন ধরে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ মাদক চক্র উপজেলার কাছেমাবাদ হাই মার্কেট এলাকায় গৌরনদী পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সাবিনা খন্দকারের বাড়ির পেছনে জমজমাট মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসিয়ে আসছিল। এর ফলে ওই এলাকাসহ পার্শ্ববর্তি এলাকাসমূহের উঠতি বয়সী তরুন ও যুবকেরা দিন দিন জুয়া ও মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে জুয়া ও মাদকের টাকা সংগ্রহে নানা অপরাধ কর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক এ অবক্ষয় দেখে স্থানীয় কিছু সচেতন যুবক প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তারা একাধিক বার নিষেধ করলেও চক্রটি তাদের মাদক ও জুয়ার আড্ডা বন্ধ করেনি।
ওই গ্রামের বাসিন্ধা ও গৌরনদী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ সেকেন্দার আলী সিকদারসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার সন্ধ্যার পরে ওই চক্রটি তাদের মাদক ও জুয়ার আড্ডাটি বসালে স্থানীয় প্রতিবাদী যুবক মৃদুল সরদারের নেতৃত্বে ১৪/১৫জন সচেতন ও প্রতিবাদী যুবক মিলে সেখানে চড়াও হয়ে হামলা চালিয়ে মাদক ও জুয়ার আড্ডাটি ভেঙ্গে দেয়। এ সময় মাদক ও জুয়ার আড্ডা’র নেতৃত্বদানকারী ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে আজিজুল সরদার, মোশারফ খলিফার ছেলে মোর্শেদ খলিফা, আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে সাইদুর রহমান, নুরুল ইসলাম বেপারীর ছেলে মনির বেপারী, মোস্তফা সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, আলাউদ্দিন বেপারীর ছেলে মিজান বেপারী মিলে প্রতিবাদী যুবকদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে মুখোমুখী সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় ওই গ্রামের মোঃ নাছির সরদারের ছেলে প্রতিবাদী যুবক শুভ সরদার (২০) ও আব্দুল হাই সরদারের ছেলে প্রতিবাদী যুবক রাব্বি সরদার (১৯) ও আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে জুয়াড়ী সাইদুর রহমান আহত হয়।
ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে স্থানীয় নারী পৌর কাউন্সিলরের সাবিনা খন্দকারের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ মাদক ও জুয়াড়ী চক্রের সদস্যরা প্রতিবাদী যুবক মৃদুল সরদারের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধরের হুমকি দিয়ে আসে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার কাছেমাবাদ বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় দু’পক্ষ দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় মাদক ও জুয়াড়ী চক্রের হামলায় ওই গ্রামের মাহফুজ সরদারের ছেলে প্রতিবাদী যুবকদের দলনেতা মৃদুল সরদার (২২), আব্দুল লতিফ কবিরাজের ছেলে প্রতিবাদী যুবক লিওন কবিরাজ (২০), মোঃ দুলাল সরদারের ছেলে প্রতিবাদী যুবক সুজন সরদার (১৯), মোঃ বাচ্চু খানের ছেলে প্রতিবাদী যুবক সোহান খান (২০), সিরাজ বেপারীর ছেলে প্রতিবাদী যুবক মিরাজ বেপারী (১৯) আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত রাব্বি সরদার ও সুজন সরদারকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখলেও দু’পক্ষই ছিল মুখোমুখী অবস্থানে। ফলে যে কোন সময়ে আবারো ঘটতে পারে ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ একাধিক জীবনহানির মত মারাতœক কোন অঘটন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে প্রতিবাদী যুবকদের দলনেতা মৃদুল সরদাকে মারধরের হুমকির কথা অস্বীকার করেছেন গৌরনদী পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর সাবিনা খন্দকার। তিনি বলেন, আমি কোন পক্ষের নই, ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। ওখানে কি হয়েছে, কারা কারা মারামারি করেছে তাও আমার জানা নেই।
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মুনিরুল ইসলাম মুনির জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।