0
(0)

জয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ//
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় পর্যটকদের আকর্ষন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এছাড়াও রয়েছে হামহাম জলপ্রপাত, মাধবকুন্ড লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধসহ নানা পর্যটন সমৃদ্ধ স্থান। নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করেও পর্যটকরা এই উদ্যানে বিচরন করতে দেখা গেছে। মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত সহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র সমুহে দর্শনার্থীর তেমন উপস্থিতি না ঘটলেও লাউয়াছড়া মিশ্র চিরহরিৎ এই বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করায় বিশেষত ছুটির সময়ে অত্যধিক পর্যটক, যানবাহনের হুড়োহুড়ি ও লোকে লোকারন্য দেখা দেয়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকে সেখানে পর্যটকদের ঢল নামছে। বনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলতে রেস্টহাউস, নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়ায় কয়েকটি ইকো-কটেজ, বাঘমারা এলাকায় স্টুডেন্ট ডরমিটরি, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে প্রকৃতি সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের ব্যাপক বিচরন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
লাউয়াছড়ায় আগত পর্যটকরা জানান, সারা বছর কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। ঈদ কিংবা অন্য কোন ছুটি পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে দুরে কোথাও ঘুরে যেতে ভালো লাগে। তবে এই বনে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও বন্যপ্রাণি দেখতে ও উপভোগ করতে এখানে আগ্রহ বেশি। এছাড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির প্রাণ বৈচিত্রের ভেতর ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির অর্কিড, ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে।
বনের বিশেষ আকর্ষন আগর বাগান, বিরল প্রজাতির গাছ, নানা প্রজাতির পাখির ডাক, ছড়া, বনফুল, অর্কিড, চশমাবানর, বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় দূর্লভ উলুক। এ বনের বিচিত্র পশু-পাখি ও পোকা মাকড়ের অদ্ভুত ঝিঝি শব্দ, বানরের ভেংচি, ভালুকের গাছে গাছে ছুটাছুটির দৃশ্য দেখতে ভাল লাগে। লাউয়াছড়া সম্পর্কে জানতে ও বনের অভিজ্ঞতা অর্জনে গাইড ছাড়াও উদ্যানে রয়েছে পর্যটকদের জন্য তথ্য কেন্দ্র, ইর্কো কটেজ, ইন্সপেকশন বাংলো, গোলঘর, ফেন্সিবীজ প্রভৃতি।
উপজেলার মাধবপুরে নয়নাবিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেক ভ্রমন পিপাষু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলার মাঝে দৈর্ঘে প্রায় ৩ কিঃমিঃ পানির হৃদ ও তার শাখা প্রশাখা, চারপাশে পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে।
উপজেলার ধলই চা বাগানে বিজিবি’র সীমান্ত ফাঁড়ি সংলগ্ন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান আত্মোৎসর্গের কারনে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করেছে। হামিদুর রহমানের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে তৎকালীন শ্রীমঙ্গলের ১৭ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি সংলগ্ন স্থানে শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণী’ নির্মাণ করে। এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
উপজেলা রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত। স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসীরা এ জলপ্রপাত ধ্বনিকে হামহাম বলে। তাই এটি হামহাম নামে পরিচিত। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ী কলাবন বস্তি থেকে পায়ে হেটে রওয়ানা হতে হবে। প্রায় ৬ কিঃমিঃ পাহাড় টিলা ও ২ কিঃমিঃ ছড়ার পানি অতিক্রম করে ৩ ঘন্টা পায়ে হাঁটার পর ১৬০ ফুট উচ্চতার হামহাম জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যাবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.