হাসান বিন নোমান//
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে জনমত বক্তব্যের চুম্বুকাংশ সাজালে এমনই অর্থ দাড়ায়। সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক নেতার মূল্যায়ন সর্ম্পকে জানতে চাইলে ভোটাধিকার প্রয়োগকারী কয়েকজন এসব কথা জানান। তেমনি একজন ভোটার জিহাদুল ইসলাম। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তার মতে, সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি (সাদিক আব্দুল্লাহ) যেন জুতসই অবস্থান গড়ে নিতে না পারেন সেজন্য নানা ধরণের বির্তক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল নগরীতে। সাদিক আব্দুল্লাহ’র পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস অনুসারে তিনি চাইলে মেযর নির্বাচিত না হয়েই পেশী শক্তি ব্যবহার করতে পারতেন।
জিহাদুল মনে করেন, তিনি চেয়েছেন পারিবারিক রানৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কাঁধে ভর করে নয় নিজে কিছু করে দেখাতে। তিনি সফল। এখন অপেক্ষা, উন্নত বিশ্ব’র গল্প শুনিয়ে শহরের মানুষেকে মুগ্ধ করা নয়; সত্যিকারের উন্নত শহর দেখা। শুধু জিহাদুল নয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন উত্তরণ-এর সভাপতি জোবায়ের হোসেন শাহেদ মনে করেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে আমরা দেখি তরুন নেতৃত্বকে সবাই গ্রহণ করেন। কারন মানুষ মাত্রই নতুনত্বের অপেক্ষা করে। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও তরুনদের মাঝে তার কর্মকান্ড ও যোগ্যতা দিয়ে অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। আর সে কারনেই তিনি সিটি মেয়র নির্বাচিত হতে পেরেছেন। এই সংস্কৃতিকর্মী আরও বলেন, পিছনে যে যত সমালোচনাই করুক। এবারের নির্বাচনে অন্যান্য সকল প্রার্থীর চেয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সব দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন। কারন তরুনদের সমর্থন ছিল সম্ভাবনাময়ী এই মানুষটির পক্ষে।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মূল্যায়ন নিয়ে এভাবে কথা হয় অনেকের সাথেই। দুই তৃতীয়াংশের মতামত হল, সেরনিযাবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র জয়ের পেছনে ‘সমালোচকরা’ যা বলুক, মূলত তার মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় জয়ের মাল্য পরেছেন। এমনকি, নির্বাচন পরবর্তী বেশ কয়েকটি কাজ দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এখন সাদিক আব্দুল্লাহ। সাধারণত, নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রার্থীদের কাছে ভোটারদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করতে দেখা যায়্ এর ব্যত্যয় হয়নি এবারও। ৩০ জুলাইয়ের আগে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়ালেও নির্বাচন পরবর্তী একপক্ষকালে অন্যকোন প্রার্থীকে একদিনের জন্যও মাঠে দেখা যায়নি। তবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ শপথ গ্রহণের আগেই নেমে এসেছেন নাগরিক সেবায়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তিনি একজন মন্ত্রীর পুত্র, প্রধানমন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে পরিচয়ে নয় একজন ‘নগর সেবক’র খ্যাতি পেয়ে গেছেন।
জানা গেছে, জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুর সর্বত্র সাদিক আব্দুল্লাহ’র উপস্থিতি পেয়ে অত্যুজ্জল ভবিষ্যৎ দেখছেন নগরবাসী। জানা গেছে, নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে যখন অনুপ্রবেশকারীরা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নীল নকশা আঁকছিলেন তা টের পেয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের দ্বারস্থ হন তিনি। আন্দোলনরতদের কাছে গিয়ে আশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে বরিশালের সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপদের ঘরে ফেরাতে সক্ষম হন। এমনকি ওই আন্দোলনে গিয়ে স্কুলছাত্রী ঐশ^র্য মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেললে নিজের টাকায় সেই মোবাইল কিনে দেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
এরপর নিজস্ব উদ্যোগে স্কুলের সামনের সড়কে জেব্রা-ক্রসিং করেন এবং সড়ক পারাপারে সতর্কতা সংযুক্ত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। ওদিকে নির্বাচনের পরপরই পরাজিত প্রার্থীদের বাসায় ছুটে যান তিনি। মজিবর রহমান সরোয়ার, ওবায়দুর রহমান মাহবুবের সাথে কথা বলে একসাথে কাজ করে ভেনিস বরিশাল গড়ে তোলার অনুরোধ করেন। সাদিক আব্দুল্লাহ ইতিমধ্যে সাংবাদিক সংগঠনসহ বেশ কিছু পেশাদারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে কথা বলে নির্ধারণ করতে চাইছেন নগরীর প্রধানত সমস্যাগুলো কি এবং সেগুলো সমাধানে প্রথমতই কোন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
নির্ভরযোগ্যসূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্বাচনের পরবর্তী একটি দিনের জন্যও অলস বসে থাকেননি নবনির্বাচিত এই মেয়র। তিনি নগরীর বর্ধিত ও বস্তি এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শণ করে সরাসরি কথা বলছেন দরিদ্র বাসিন্দাদের সাথে। জানা গেছে, নগরী উন্নয়নে সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা প্রনয়ন করেই আগামী পাঁচ বছর পার করতে চান সাদিক। সে অনুসারে নগরীর বর্ধিত ও বস্তি এলাকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নে হাত দিবেন। সূত্র মতে, ইতিমধ্যে নগরীর পলাশপুর, কেডিসি বস্তি ও রসূলপুর বস্তিতে নবনির্বাচিত মেয়র তার নিজস্ব লোক দিয়ে দরিদ্রদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে অনুন্নত এলাকায় টিউবয়েল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও আথিৃক সহায়তা করবেন। পরিকল্পনা রয়েছে, বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করারও বলে জানা গেছে। তবে এসব কাজ রাখঢাক করেই করছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি কাজ করে পুরানো সকল মেযরদের উন্নয়নের রেকর্ড ভাঙ্গতে চান। চমক দেখাতে চান নগরবাসীকে। সাদিক আব্দুল্লাহ’র এমন কর্মকান্ডে নিন্দুকদের মুখে কুলুফ আটকে গেছে বলে মনে করেন নগরীর বিশিষ্টজনরা।