ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

রাজু ফকির,স্পোর্টস ডেস্ক//
দাসের ব্যাটিং তাণ্ডব রেকর্ড গড়া দ্রুততায় দলের শুরু।ম্যাচের প্রায় পুরোটায় আত্মবিশ্বাসী পদচারণা। যে সংস্করণে এখনও শক্ত নয় পায়ের নিচে জমিন এবার সেই টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্সে কুপোকাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ/
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডাকওয়ার্থ-লুইস আইনে ১৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হার দিয়ে শুরু করেও তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
বাংলাদেশের এটি মাত্র দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। আগের সিরিজ জয়টি ছিল ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডে।
ফ্লোরিডার লডারহিলে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২০ ওভারে করেছিল ১৮৪ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭.১ ওভারে ১৩৫ রান তোলার পর খেলা শেষ হয় বৃষ্টিতে।
কিছু দিন আগে আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল যে দল, সেই বাংলাদেশই এবার হারিয়ে দিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল দাপুটে। ম্যাচের প্রথম বলেই স্যামুয়েল বদ্রিকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন লিটন। পরের ওভারে বোলিংয়ে অ্যাশলি নার্স। আগের দুই ম্যাচে শুরুতে দুটি করে উইকেট নেওয়া স্পিনারকে এবার লিটন মারেন টানা দুটি ছক্কা। পরের বলে বাউন্ডারি।
তৃতীয় ওভারে উৎসবে সামিল তিনিও। বদ্রিকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারির পর স্লগ সুইপে ওড়ান ছক্কায়।
স্পিনের তিন ওভারে তুলোধুনো হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাত বাড়াল পেসে। ফুটন্ত কড়াই থেকে গিয়ে পড়ল যেন জ্বলন্ত উনুনে।
আন্দ্রে রাসেলের প্রথম দুই বলেই লিটনের চার ও ছক্কা। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি ওপাশে যাওয়ার পর ওভারের শেষ তিন বলে তামিমের দুই বাউন্ডারি। ৩.৪ ওভারে দল স্পর্শ করে পঞ্চাশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রততম দলীয় ফিফটি।
জুটির পতন শেষ পর্যন্ত রানের নেশাতেই। পঞ্চম ওভারে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে স্কুপ করতে গিয়ে তামিম ক্যাচ দেন শর্ট ফাইন লেগে। ফেরেন ১৩ বলে ২১ রান করে। থামে ২৮ বলে ৬১ রানের জুটি।
৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৬৬। এমন দুর্দান্ত ভিত্তি পেয়েও সৌম্য সরকার পারেননি ছন্দে ফিরতে। তিনে নেমে আগের দিনের মতোই আউট হয়েছেন স্লোয়ার বল উড়িয়ে মেরে (৫)।
লিটন ফিফটি স্পর্শ করেন ২৪ বলে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে ফিফটির পর টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটি।
রঙিন পোশাকে দেশের হয়ে এটি লিটনের প্রথম ফিফটি! আগের ১৪ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছিল ৪৩ রান; ১২ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৩৬।
তবে জোড়া উইকেটের পতন রানের জোয়ারে আসে ভাটার টান। গতি ফেরানোর চেষ্টায় উইকেট হারাতে হয় আরও। ১৪ বলে ১২ রান করে মুশফিকুর রহিম ফেরেন শরীর সোজা বল গ্লাইড করতে গিয়ে।
পরের ওভারে শেষ হয় লিটনের পথচলাও। ৩২ বলে ৬১ রানের ইনিংসের দুই ভাগ যেন বাংলাদেশ ইনিংসের গতিপথের প্রতিচ্ছবি। প্রথম ১৬ বলে করেছিলেন ৪৫ রান, পরের ১৬ বলে ১৭
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর কাজটা এরপর ছিল কঠিন। উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি বাড়াতে হতো রানের গতি। সাকিব পারেননি আগের দিনের মতো ঝড় তুলতে (২২ বলে ২৪)। ১০ ওভারে রান ছিল ৯৭। পরের ৫ ওভারে আসে ৪০।
১৬.৩ ওভার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে আধ ঘণ্টা। শেষের ব্যাটসম্যানদের কাজটা হয়ে ওঠে আরও কঠিন। মাহমুদউল্লাহ তার পরও দারুণ ব্যাটিংয়ে মিটিয়েছেন শেষের দাবি। তবে ঝড় ওঠেনি আরিফুল হকের ব্যাটে।
২০ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। ১৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত আরিফুল।
বড় রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায়নি প্রত্যাশিত ঝড়ো শুরু। ছন্দে না থাকা এভিন লুইসকে সরিয়ে ওপেনিংয়ে ফেরানো হয় চাডউইক ওয়ালটনকে। মেলেনি সমাধান।
আন্দ্রে ফ্লেচারকে তার প্রিয় শটে ফাঁদে ফেলে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। পঞ্চম ওভারে তিন বল করে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন নাজমুল অপু। আর আর ফিরতেই পারেনি মাঠে। বদলি কাজ চালাতে আসা সৌম্য ফিরিয়ে দেন ওয়ালটনকে।
পরের ওভারে সাকিবের নিচু হয়ে যাওয়া স্কিড করা বলে বোল্ড মারলন স্যামুয়েলস। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান ছিল ৩ উইকেটে ৩২।
দিনেশ রামদিন ও রভম্যান পাওয়েল চেষ্টা করেছেন দলকে টেনে নিতে। কিন্তু গতি পায়নি ইনিংস।
প্রায় মরা ম্যাচ জীবন্ত হয় আন্দ্রে রাসেলের খুনে ব্যাটিংয়ে। গিয়েই শুরু করেন ছক্কার ঝড়। প্রথম ২৪ রান করেন ৪ ছক্কায়!
রাসেলের ব্যাটেই অভাবনীয় কিছুর আশায় ছিল ক্যারিবিয়ানরা। সেই আশার কফিনে পেরেক ঠুকে দেন মুস্তাফিজ। ৬ ছক্কায় ২১ বলে ৪৭ রান করা রাসেলকে ফিরিয়ে সরিয়ে দেন শেষ বাধা।
বাংলাদেশের জন্য যা আনন্দ বৃষ্টি। সিরিজের প্রথম সকালে ৪৩ রানে গুটিয়ে শুরু হয়েছিল যে সফর, সেটির সমাপ্তি হাসি, নাচ আর জয়ের উচ্ছ্বাসে মাঠ প্রদক্ষিণে।