আগৈলঝাড়ায় ডাক্তার বখতিয়ার আল মামুনের হাতে জিম্মি হয়ে পরেছে উপজেলা হাসপাতাল

0
(0)

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ
চিকিৎসাসেবা প্রদান ঘোষণার সুযোগে স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে আগৈলঝাড়ায় ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিকেল অফিসার ডা. বখতিয়ার আল মামুনের বিরুদ্ধে পুরো হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা জিম্মি করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিরুদ্ধে।
তার প্রভাব বিস্তারেরর কারণে অন্য চিকিৎকেরা হাসপাতাল ছাড়া হলেও অসহায় হয়ে পড়া উপজেলা ৫০শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান ডা. আলতাফ হোসেনের প্রতিকার করার কোন মতা নেই। অভিযোগ রয়েছে, ডা. বখতিয়ার আল মামুনের কারণে হাসপাতালে আসা চিকিৎসকেরা বেশীদিন স্থায়ী হতে পারছে না। ফলে মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা থেকে স্থানীয় দুই লাধিক জনগন বঞ্চিত হয়ে আসছে। অন্যকোন মেডিকেল অফিসার না থাকায় ডা. বখতিয়ার আল মামুন হাসপাতালের একমাত্র আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
সরেজমিনে রবিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিজের কে রোগী দেখছিলেন ডা. বখতিয়ার আল মামুন। টেবিলের এক প্রান্তে বসে রোগীর কথা তিনি, রোগীর কথা শুনে টেবিলের অপর প্রান্তে বসে রোগীর ব্যবস্থাপত্র লিখছেন ঔষধ কোম্পানীর লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবস্থাপত্র লেকা ব্যাক্তিটি অপসোনিন কোম্পানীর মেডিকেল প্রমোশন অফিসার অলক বিশ্বাস। তার ব্যবস্থাপত্র লেখা শেষ হলে তাতে শুধু স্বার করছেন ডা. বখতিয়ার আল মামুন।
নাম না প্রকাশের শর্তে হাসপাতালে কর্মরত একাধিক ষ্ঠাফ ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা অভিযোগে বলেন, ডা. বখতিয়ার আল মামুন এভাবেই প্রতিদিন ঔষধ কোম্পানীর লোকজন দিয়ে ব্যবস্থাপত্র লেখাচ্ছেন। এরকম যাদের দিয়ে ব্যবস্থাপত্র লেখাচ্ছ্নে তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন জুলফার কোম্পানীর মো. আনোয়ার হোসেন, ওরিয়ন কোম্পানীর আশ্রাফ আহম্মেদ, এসিআই কোম্পানীর মো. মজিবুর রহমান।
সূত্রগুলো জানায়, হাসপাতালে সুনামের সাথে চিকিৎসা প্রদান করে আসছিলেন ডা. সুবল কৃষ্ণ কুন্ডু ও ডা. মোহম্মদ আলম মীর্জা। ডা. বখতিয়ার আল মামুন তাদের তাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। একারণে ডা. মোহম্মদ আলম মীর্জার সাথে ডা. বখতিয়ার আল মামুনের সাথে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছিল। তাদের তাড়িয়ে পুরো হাসপাতাল জিম্মি করে নেন ডা. বখতিয়ার আল মামুন।
ডা. বখতিয়ার আল মামুনের বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের চাঁদ ত্রিশিরা গ্রামে। তিনি পয়সারহাট বন্দরে টিন ব্যবসায়ি মহসিন হোসেন খোকনের ছেলে।
মিসেস শামীমা রাজ্জাক নামের এক রোগী জানান, হাসপাতালে তিনি ডা. বখতিয়ার আল মামুনকে দেখাতে গেলে চিকিৎসক তার নির্ধারিত ১শ টাকা ফি নিয়ে তাকেও একইভাবে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়া হয়। তিনি অভিযোগে আরও বলেন, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হবার সাথে সাথে হাসপাতালের বারান্দায় বসে একাধিক ঔষধ কোম্পানীর লোকজন তার স্বামীকে ঘিরে ধরে ব্যবস্থাপত্র দেখে তাদের মোবাইল ফোনে ওই ব্যস্থাপত্রর ছবি নেয়ার জন্য। এঘটনায় তার স্বামীর সাথে অনেক বাকবিতন্ডাও হয় ওই কোম্পানীগুলোর লোকজনের সাথে।
মামলায় ভুক্তভোগীরা ও থানার একাধিক সাব ইন্সপেক্টর অভিযোগে বলেন, প্রতিপরে হামলায় আহত ভর্তি রোগীদের হাসপাতাল থেকে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদান করায় থানায় মিথ্যা মামলার প্রবনতা বেড়েছে। একারণে সত্য ঘটনা মিথ্যা, আর মিথ্যা ঘটনা সত্য হওয়ায় সার্টিফিকেট অনুযায়ি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. রাজ্জাক মোল্লা।
ডা. বখতিয়ার আল মামুন তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর চাপের কারণে অন্য লোক দিয়ে তিনি ঔষধের নাম লিখে তাতে নিজে স্বার করেন। এর মানে এই নয় যে, ওই ব্যবস্থাপত্রের দায় তার নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল তাকে দিয়ে তাদের কাজ হাসিল করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা.আলতাফ হোসেন বলেন, বিষয়গুলো তার কাছে কেউ লিখিত আকারে অভিযোগ করেনি। তিনি ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত ডাক্তার ভিজিট আওয়ার নির্ধারণ করেছেন। এই সময়ের আগে ও পরে হাসপাতাল চত্তরে কোন কোম্পানীর লোক থাকার কথা নয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন মো. মানোয়ার হোসেন ডা. বখতিয়ার আল মামুনের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ শুনে বলেন, হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহের বুধ ও শনিবার দুপুর একটার পরে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ডাক্তার ভিজিট করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সে নিয়ম কেন মানা হচ্ছে না এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি। সারা দেশেই ডাক্তার সংকট রয়েছে, সরকারের সদিচ্ছার কারণে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.