কী করবেন হঠাৎ জ্বরে

সবুজ বাংলা ডেস্ক//
কখনো গরমে ভিজে বা কখনো বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগছে বা আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় কিছু কিছু ভাইরাস শরীরের ওপর আক্রমণের সুযোগ পায়। আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যাঁরা খাপ খাওয়াতে পারেন না, তাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথাসহ নানা অসুখে। হঠাৎ এমন জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা সাধারণের কাছে এটি ‘ফ্লু’ বা ভাইরাল জ্বর হিসেবে পরিচিত।
এমন আবহাওয়ার কারণে বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া৷ ফলে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ছে৷ সঙ্গে শরীরজুড়ে ব্যথা৷ এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। হঠাৎ করে ঠান্ডা যাতে না লাগে, তার জন্য বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে৷
জ্বরের সঙ্গে যদি শরীরে র্যাশ বা ত্বকে ছোট লাল দানা দেখা দেয়, তবে তা ভীতির কারণ হতে পারে। জ্বরের ধরন-ইতিহাস, অন্যান্য উপসর্গ-লক্ষণ বিশ্লেষণ, বিশেষ করে র্যাশের প্রকৃতি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। র্যাশ বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন রঙের হতে পারে। রোগ অনুযায়ী জ্বরের সঙ্গে র্যাশ দেখা দেওয়ার সময় এবং স্থানে ভিন্নতা থাকতে পারে। টাইফয়েড জ্বর, বাতজ্বরসহ নানা কারণে জ্বর হতে পারে।
লক্ষণ
রোগী মূলত জ্বর, কেউ কেউ মাথাব্যথা, সর্দি, অরুচি, গলাব্যথা, কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ঠান্ডা-সর্দির কারণে কান বন্ধ হতে পারে। কান বন্ধের সঙ্গে কানে ব্যথাও থাকে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুর প্রচণ্ড সর্দি লেগে যায়। কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরও দেখা দিতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে জ্বর ততটা তীব্রভাবে না-ও হতে পারে।
জ্বর হলে কী করবেন
জ্বর হলে শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ে। তাই বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। অনেকে জ্বর হলে কিছু খাবেন না বলে ঠিক করেন। এতে নিজেরই ক্ষতি। জ্বরে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রাকে ১০০–এর নিচে নামিয়ে আনা, গা মোছা ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা হয়। জ্বরের সময় বেশির ভাগ মানুষেরই রুচি কমে যায়। তাই এই সময় রোগীর খাবারের প্রতি অনীহা থাকলেও পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে রোগীকে সঠিক খাবারদাবার চালিয়ে যেতে হয়।
১. তরল: জ্বরের সময় যেই খাবারটির চাহিদা সবচেয়ে বৃদ্ধি পায়, সেটি হলো তরল জাতীয় খাবার। রোগীর বিপাকের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিকে আনা, হজমে ব্যাঘাত না ঘটানো ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে তরল খাবার নির্ধারণ করা হয়। তরল হিসেবে ফলের রস, স্যুপ, লাল চা ইত্যাদি খেতে পারেন। বিশেষ করে ভিটামিন সি-যুক্ত ফল, যেমন: কমলা, মালটা, লেবু, জাম্বুরা, আনারস ইত্যাদি। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
২. নরম পথ্য: তরলের পাশাপাশি রোগীকে নরম বা অর্ধ তরল খাবার দেওয়া গেলে ভালো। রোগীকে যেন বেশি চিবোতে না হয়, সহজে গেলা যায় এবং সহজে হজম হয় সে জন্য নরম পথ্য নির্বাচন করতে হবে। যেহেতু তরল খাবারের ক্যালরি কম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম পাওয়া যায়, তাই তরল খাবারের পাশাপাশি রোগীকে নরম খাবারও দিতে হবে। নরম পাতলা মুগডালের খিচুড়ি, জাও ভাত, সুজি, সাগু, পুডিং, নরম কাটা ছাড়া মাছ ইত্যাদি খাবার রোগীকে দিতে পারলে ভালো।
শিশুদের দিকে বিশেষ নজর
ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত শিশু প্রায়ই পানিশূন্যতায় ভোগে। কেননা জ্বরের তাপে শরীর পানি হারায়। তাই শিশুকে প্রচুর পানি ও তরল খাবার দিন। শুধু পানি পান করতে না চাইলে ফলের রস, তরমুজ বা আঙুর, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদিও দিন। সেই সঙ্গে শিশুর দরকার প্রচুর বিশ্রাম। বেশির ভাগ শিশুর খাওয়ার রুচি যায় নষ্ট হয়ে, কিছুই খেতে চায় না। এমন খাবার দিন, যা অল্প খেলেও বেশ শক্তি পাবে। যেমন দুধ-চিনি দিয়ে তৈরি কোনো নাশতা, মুরগির মাংসের স্যুপ, পাস্তা, ফলমূল ইত্যাদি।
জ্বর বাড়লে গা মুছে দিন, সঙ্গে সাধারণ প্যারাসিটামল। ওষুধের সঠিক মাত্রাটি জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। নাক বন্ধ থাকলে স্যালাইন পানির ড্রপ ব্যবহার করা যায়। খুসখুসে কাশিতে মধু বা আদার রস বেশ আরাম দেবে। ভাইরাল ফ্লু বা জ্বর পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু জ্বর দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মাত্রার হলে, শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে বা সে খাওয়াদাওয়া একদম ছেড়ে দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।