কমলগঞ্জে বন্যা প্লাবিত মানুষের দুর্ভোগ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু

0
(0)

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ//
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই ও মনু নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ ৫ জন মারা গেছেন। শত শত কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া দেড় লক্ষাধিক মানুষ চরম মানবেতরভাবে জীবন ধারণ করছেন। বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধারে সর্বশেষ কয়েকটি স্থানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী। সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য প্রদর্শনী খামারসহ দেড় হাজারেরও বেশি পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা প্লাবিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা রান্নাবান্না করে ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ধলাই নদীর ৮টি স্থান দিয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় ইসলামপুর, আদমপুর, আলীনগর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর, পৌরসভা, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সীবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় বাড়িঘরে চার থেকে পাঁচ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়। এসব এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। চারদিনের বন্যার প্রবল ¯্রােতে উপজেলার কাঠালকান্দি গ্রামের আব্দুল ছত্তার (৫০) ও তার ছেলে আব্দুল করিম (২৫), আলীনগর বস্তির সেলিম মিয়া (৩৮), শমশেরনগর ভাদাইরদেউলে প্রতিবন্ধি রমজান আলী (৪০) ও রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামে মিছির মিয়ার দেড় বছর বয়সি শিশু সন্তান ছাদির মিয়া পানিতে ডুবে মারা যান। পানির ¯্রােতে ভারতের কৈলাশহরে যাতায়াতে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কে কালভার্ট ব্রিজ ধ্বসে পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে।
শমশেরনগর-মৌলভীবাজার, শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক যোগাযোগ তিনদিন বন্ধ ছিল। আদমপুর, পৌরসভা, মুন্সীবাজার, পতনঊষার সহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা, আধাকাঁচা প্রায় সহ¯্রাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়ন সহ উপজেলায় ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয় এবং এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকদের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার শুরু থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে নৌকা ও স্পিডবোর্ড না থাকায় বেশ কিছু পরিবার বাড়িঘরে পানিতে আটকা পড়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধারে সর্বশেষ কয়েকটি স্থানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী টিম।
এদিকে উপজেলার নব্বই শতাংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য প্রদর্শনী খামারসহ প্রায় ১,৫৫০টি পুকুর প্লাবিত হয়। ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার পরিমাণ প্রায় ৪৭০ মে.টন। খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা এবং মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার কোটি বিশ লক্ষ টাকা বলে মৎস্য অফিস সূত্র নিশ্চিত করে। এছাড়া প্রায় তিন হাজার হেক্টর আউশ ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পতনঊষার ইউনিয়নের তোয়াবুর রহমান, মসুদ মিয়া বলেন, বন্যায় পানিবন্দি লোকজনকে তাৎক্ষনিকভাবে প্রশাসনিক পক্ষ থেকে নৌকা কিংবা স্পিডবোর্ড দ্বারা উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে অনেক পরিবার সদস্যরা কোমর পানিতেও ঘরে বসে দিন কাটিয়েছে। শেষ সময়ে যখন পানি নামতে শুরু করেছে তখন সেনাবাহিনী দ্বারা কিছু উদ্ধার করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক পানিতে ডুবে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলার প্রায় সহ¯্রাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামতে সরকারিভাবে বরাদ্ধ প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, নিহত পরিবারদের ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যাপ্লাবিত লোকদের মধ্যে অব্যাহতভাবে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.