বান্দার জন্য সুপারিশ করবে কোরআন ও রোজা

0
(0)

হাসান বিন নোমান//
আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি,আমরা মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত করছি। দ্রুতই রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, তাই পুণ্যকর্মের কোন দিক বাদ দেয়া চলবে না। সব ধরণের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামি রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহ প্রেমিকে পরিণত করে।
আসলে মাহে রমজানের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত বড়ই কল্যাণ ও বরকতমণ্ডিত। সে নিতান্তই দুর্ভাগা যে এসব বরকত ও কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখে আর অন্যান্য দিনের মতই রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করে।
এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এই পবিত্র মাস ইবাদত বন্দেগী ও দান খয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব কিছুর মাঝে জোশ সৃষ্টি হয়। মুমিন-মুত্তাকি বান্দারা এই মাসে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দান খয়রাত করে থাকেন এবং গরীব অসাহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন। মহান খোদাতায়ালার কাছে আমাদের এই কামনা তিনি যেন আমাদের এই দান খয়রাত, ইবাদত বন্দেগী-সিয়াম সাধনাকে কবুল করে আমাদেরকে নাজাত দেন। আর পবিত্র এই রমজানে মহান খোদাতায়ালা তার পরম সান্নিধ্যে আমাদের সিক্ত করবেন এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা।
মাগফিরাত ও নাজাতের দশকে ফরজ ইবাদতের পাশা-পাশি আমরা যদি বেশি বেশি নফল ইবাদতে রত হই আর গভীর মনোনিবেশ সহকারে পবিত্র কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য যাচনা করি তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদের লাইলাতুল কদরের স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য দান করবেন। রমজান এবং পবিত্র কোরআন করিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- ‘রমজান সেই মাস যাতে নাযেল করা হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ্ তোমারে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)।
পবিত্র রমজান মাসেই মহানবী (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত বাণী হজরত রসুল করিম (সা.)-এর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এছাড়া ‘মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কোরআনকে মহানবী (সা.)-এর কাছে দু’বার পাঠ করে শুনান’ (বোখারি)। এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সাথে কোরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কোরআন পাঠ এই সব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)। আমরা যেহেতু রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি, তেমনিভাবে যদি কোরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কোরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.