কিশোর অপরাধ বাড়ছে

0
(0)

দেবাশীষ সাহা দেবা, ক্রাইম রিপোর্টারঃ
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ষোলশহরে পুলিশের এক এসআইকে গুলি এবং ১১ মার্চ সদরঘাট থানা এলাকায় সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় জড়িতদের সবাই কিশোর বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। গত ২ মে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পাথরের ওপর থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রাথমিক সন্দেহজনকভাবে আটক হওয়া তাসফিয়ার কথিত প্রেমিক আদনান মির্জার বয়সও ১৬ বছর। কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়াতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হলে পুলিশের তরফ থেকে সার্বিক বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। খুনসহ কয়েকটি অপরাধের ঘটনায় কিশোর অপরাধীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোরদের বিভিন্ন গ্রুপ, গ্যাং কালচার এবং একই স্টাইলে চুলের ছাঁট দেয়া কিংবা দাড়ি রাখা, শরীরে উল্কি আঁকাসহ নানা ধরনের প্রবণতা বেরিয়ে আসে। আবার এসব কিশোরই নিজ নিজ এলাকায় মাদক সেবন ও বেচাকেনা, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ, খুলশী, চান্দগাঁও, দেওয়ানবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর ও পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের শতাধিক গ্রুপের অস্তিত্ব রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এলাকাভিত্তিক ‘বড় ভাইরা’ তাদেরকে বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলছে।
কিশোর অপরাধ ঠেকানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে স্পটভিত্তিক আড্ডাবাজির ওপর নজরদারিসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। পুলিশের নেয়া পদক্ষেপে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, আমরা যখন বিশেষ একটা শ্রেণি অর্থাৎ কিশোর বা উঠতি বয়সীদের অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা এবং তা প্রতিরোধের বিষয়ে নজর দিই, তখন সেখানে আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি আরো কয়েকটি অনুঘটকও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। তাই কিশোর অপরাধ ঠেকাতে কেবল পুলিশি পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করলে ভুল হবে। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন এবং অভিভাবকদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতার পরিচয় দেয়া।
অপরাধ বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, কিশোররা ভিনদেশি সংস্কৃতিচর্চা ও তাতে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী তাদের অভিভাবকরা। অল্প বয়সী শিশু-কিশোরদের মোটরবাইক কিংবা গাড়ি কিনে দেয়ার মতো আবদার মেটানো আত্মঘাতী কাজের শামিল। টাকা আছে বলেই তা দিয়ে নিজের শিশু-কিশোরকে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়া একেবারেই অনুচিত। প্রযুক্তির অস্বাভাবিক দ্রুতগতির মতোই নিজেদের জীবনে সবকিছু নিমেষেই অর্জন করার মানসিকতায় আক্রান্ত হচ্ছে কিশোররা। আর কেবল প্রয়োজন মেটানোর পেছনেই পাগলের মতো ছুটতে গিয়ে সন্তানরা কী করছে, তা আর দেখছেন না অভিভাবকরা। এটা বদলাতে হবে। অনুশাসন মেনে চলায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য সন্তানদের গাইড করতে হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.