কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের গ্রেফতার ফেসবুকে শিল্পীদের প্রতিবাদ

এস এম রহমান হান্নান স্টাফ রিপোর্টার//
কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সংগীতশিল্পী শফিক তুহিনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর।
তার মগবাজারের নিজস্ব অফিস থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল গ্রেফতার করে তাকে নিয়ে যায় সিআইডি কার্যালয়ে। মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিল্পীই গ্রেফতার নিয়ে নিজস্ব মতামত জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আঁখি আলমগীর লিখেছেন ‘প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, ঝগড়া, মারামারি এটাই কি সমাধান? কী হচ্ছে এসব? কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
সংগীতশিল্পী পারভেজ চলমান এই ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ‘অনেক দিন ধরেই দুঃখভারাক্রান্ত মনে শ্রদ্ধেয় তিন শিল্পী আর তাদের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ সয়ে আসছিলাম। আমরা সবাই এতটা আগ্রাসী কেন? আমরা নাকি শিল্পী! তা হলে আমাদের সেই শৈল্পিক মনটা কি স্বার্থান্বেষণ আর অর্থ-বিত্তের লালসায় ঢাকা পড়ে গেল? তিনজন মেধাবী, গুণী, দেশবরেণ্য সংগীত ব্যক্তিত্ব এভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়াতে আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু, ধুঁকতে থাকা সংগীতাঙ্গনের কতটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি আমরা বুঝতে পারছি না? শ্রদ্ধেয় আসিফ ভাই, আমার সংগীত জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে অভিভাবক হয়ে আমাকে আগলে রেখেছিলেন। শফিক তুহিন ভাই, প্রীতম ভাই, আমার অত্যন্ত কাছের দুজন বড় ভাই, আমার শুভাকাক্সক্ষী। আপনারা সবাই কি পারতেন না একটা ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে? এত কি কঠিন ছিল কাজটা? আমরা ছোটরা কী শিখলাম, কী শিখব তা হলে?’
সংগীতশিল্পী কোনাল লিখেছেন ‘শুধু মনে হচ্ছে, আজকে আমি বা আমরা কেউ এমন পরিস্থিতিতে পরলে সবার আগে আসিফ ভাই এগিয়ে আসতেন, আর বলতেন, ‘ঘাবড়াবা না একদম… আমি আছি, দেখছি কী করণীয়. ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে!’ এমন কথা তিনি অনেক বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলেছেন, এবং তিনি তার সাধ্যমতো করেছেন!
শান লিখেছে, ‘ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক, আসিফ আকবর ভাই ফিরে আসুক আমাদের মাঝে শিল্পী সমাজের সিনিয়রদের জরুরি হস্তক্ষেপ চাই’। গায়ক মিলন লিখেছেন ‘ভাইয়ের মতো একজন বাংলা গানের যুবরাজ গ্রেপ্তার হওয়া মানে বাংলা গান ও বাংলার সব শিল্পীর জন্য অপমানজনক। দ্রুত এর সমাধান কামনা করছি।
সংগীতশিল্পী মুহিন বলেছেন, ‘সংগীত জগতের নক্ষত্র আসিফ আকবর ভাই। যারা বোঝেন নাই তাদের উদ্দেশ্য কী? জাতি তা জানতে চায়। আমিও ব্যতিক্রম নই। খুব শিগগির তার খোলস উন্মোচন হবে নিশ্চিত। বাংলাদেশের গান, বাংলাদেশের প্রাণ বলছি তাদের কে যে উন্মাদনা কমিয়ে দেশের গানের ভবিষ্যতের কতটুকু অপমান করলেন একটু ভেবে দেখবেন। আছি সব সময় তারুণ্যের সঙ্গে, জয় হবে নিশ্চয়… এখন শুধু অপেক্ষা।’
গায়ক সংগীত পরিচালক অয়ন চাকলাদার আসিফের গ্রেপ্তার নিয়ে বলেন, ‘টেবিলে বসেই যে ভুল বোঝাবোঝির সমাধান সম্ভব; সেটাকে মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। আসিফ আকবর ভাইয়ের মতো একজন সিনিয়র জনপ্রিয় শিল্পীকে এভাবে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া এটা অবশ্যই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যতের জন্য কোনো সুখকর ঘটনা কিংবা উদাহরণ নয়।
শফিক তুহিন তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, ১ জুন রাত নয়টার দিকে একটি চ্যানেলের ‘সার্চ লাইট’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ অনুমতি ছাড়া তার সংগীতকর্মসহ অন্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন।