0
(0)

সবুজ বাংলা ডেস্ক//
গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিট স্ট্রোক। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপত্সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।
হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়?
প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—
১. শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. যারা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।
৩. শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়:-
১। বেশি করে পানি খান
যেহেতু পানিশূন্যতা থেকেই হিট স্ট্রোক হয়, তাই গরমে দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানির শূন্যতা পূরণে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। খাবার পানির পাশাপাশি কাচা আমের ঘরে তৈরি জুস, লেবু, বেল, তরমুজের শরবত খেতে যেমন ভালো লাগবে, তেমনি তা আপনার দেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।
২। পোশাক পরুন ঢিলেঢালা ও হালকা রঙ্গের
ফ্যাশনে যাই চলুক না কেন। গরমে আঁঁটসাঁট পোষাক থেকে শরীরকে রেহাই দিন। তীব্র গরমে হালকা রঙ এর, ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক বেছে নিন। নরম কাপড়ের অন্তর্বাস অবশ্যই ব্যবহার করুন। কেন না এটি দ্রুত ঘাম শুষে নিয়ে আপনার শরীরকে ঠাণ্ডা রাখবে।
৩। জাঙ্ক ফুড একেবারেই নয়
গরমের এই দুই মাস ফাস্টফুডকে না বলুন। কেননা এতে থাকা অতিরিক্ত লবন, তেল গরমে আপনার শরীরকে আরো বেশি ক্ষতিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। শরীর ঠান্ডা থাকে এমন ঘরে তৈরী খাবার খান।
৪। গোসল করুন যতবার সম্ভব
প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা যাতে সীমা অতিক্রম না করে, এ জন্য যতবার সম্ভব গোসল করুন। তবে প্রতিবার গোসলের পরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। তা না হলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
৫। দুপুর ১২টা থেকে ২টা থাকুন ছায়ায়
দুপুর ১২টা থে ২টায় রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ গরমের পরিমাণটাও। তাই চেষ্টা করুন ঘরের বা অফিসের বাহিরে জরুরি কাজগুলো এর আগে বা পরে সেরে ফেলার। এই সময়টার সরাসরি সূর্যতাপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। ব্যাগে রাখুন ছাতা, টুপি, পানি, সানগ্লাস
ব্যাগে এই গরমে কয়েকটা জিনিস রাখতেই হবে। ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, পানি ছাড়াও রাখতে পারেন একটা পানি স্প্রে করার বোতল ও রুমাল। প্রচণ্ড রোদে ঘেমে গেলে মুখে গলায় একটু পানি স্প্রে করতে পারেন।
৭। চা কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস নয়
চা, কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস গরমে নিস্তেজ শরীরকে কিছুক্ষণের জন্যে সতেজ করলেও, এগুলোর কারণে শরীর থেকে পানি আরো দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাই এর বদলে মৌসুমি ফল ও ফলের রস বেছে নিন। সুস্থতা, সতেজতা দুটোই একসঙ্গে পাবেন।
৮। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা নয়
প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। কাজের প্রয়োজনে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগলে সেক্ষেত্রে একটু পর পর ছায়াইয় যাবার চেষ্টা করুন। ছাতা, সানগ্লাস, টুপি যা কিছু সম্ভব ব্যবহার করে রোদ থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করুন।
৯। খাদ্যতালিকার রাখুন সবজি ও ফল
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি জাতীয় খাবারগুলোকে কিছুদিনের জন্য বিদায় দিন। এর বদলে ভাত, কম তেল মশলায় রান্না মাছ, প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পারেন। কম তেলে রান্না খাবার আপনাকে এই গরমে সতেজ রাখবে।
১০। তাপমাত্রার পরিবর্তন খেয়াল রাখুন
নিজের চারপাশের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রচণ্ড রোদে চলে যাবেন না। বা প্রখর রোদ থেকে এসেই হুড়মুড় করে এসি রুমে ঢুকবেন না। একটু সময় নিন। নইলে তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে না পারলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। হিট স্ট্রোক যেকোন সময় যে কারও হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এই ঝুঁকি বেশী।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.