পিরোজপুর সরকারী বালক বিদ্যালয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে ছাত্রদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩

হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ৭ম শ্রেণির সাত থেকে আট জন ছাত্র মিলে ৪র্থ শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণির ১৫জন ছাত্রের কাছ থেকে ডলার-সৌদি রিয়ালসহ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পিরোজপুর সরকারি মাধ্যমিক বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে ৭ম শ্রেনির দিবা শাখার ছাত্র তামিমের নেতৃত্বে হৃদয়, দিগন্ত, তানভীর, সাইফ সহ ৭/৮ জনের একটি চক্র এ অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিল। হত্যা গুমের ভয়, দৈহিক নির্যাতন, ধারলো চাকু দেখিয়ে ভয় ভীতি প্রদর্শন, স্কুলের টয়লেটে প্রশ্রাব কালে মোবাইলে নগ্ন ছবি তুলে কোন মেয়ের নগ্ন ছবির সাথে জুড়ে দেয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করা হচ্ছিল। যেসব ছাত্র এই ফাঁদে পড়ে তারা বাড়ি থেকে মা-বাবার আলমিরাতে গচ্ছিত টাকা, ডলার ও রিয়াল গোপনে এনে ওই চক্রের হাতে তুলে দিত। মূলত এই টাকার বড় অংশে ভাগ বসাতো ওই স্কুলের সাবেক কয়েকজন ছাত্র। অভিভাবকদের মধ্যে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র মাহিম মল্লিকের মা সালমা আক্তার জানান, তার স্বামী মামুন মল্লিক সৌদি প্রবাসী হওয়ায় বাসায় ডলার ও রিয়ালসহ নগদ অর্থ ছিল। তার ছেলের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখান থেকে চাপের মুখে টাকা ও রিয়াল নিয়ে ওই চক্রের হাতে তুলে দেয়ার এক পর্যায়ে ছাত্র ও অভিভাবকদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পায়। তখন ছেলেকে সালমা আক্তার চাপ দিলে প্রকৃত চক্রের হদিস পাওয়া যায় এবং জানা যায় এ চক্রের নেতা তামিম শহরের রাজারহাটের বসবাসরত আরেক প্রবাসী শহীদুল ইসলাম সিকদারের ছেলে। এ ঘটনায় ১০জন অভিভাবক ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশাসন ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর দিবা শাখার ছাত্র মোহাম্মদ তামিম (রোল নং-১২৬), দিগন্ত মৃধা (রোল নং-৩৪) ও তানভীর আহমেদ হৃদয়কে ( রোল নং-৩৯) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর একে একে বের হতে থাকে না না চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বুধবার ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে শ্রেণি কক্ষে থাকা ১৫/১৬ জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানায় তাদের নানা ভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হতো। আর অভিযুক্তরা এই বলে হুমকি দিত যে এ বিষয়টি কেউকে জানালে তাদের বস্তায় ভরে গুম করে ফেলা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানালো তাদের অভিনব প্রতারনার কথা, ৭ম শ্রেণীর পড়–য়া অভিযুক্তরা তাদের বাইসাইকেলের ভাঙ্গা অংশ নিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলের ব্যাগের ভিতরে দিয়ে তাদের চোর বলে তাদের ব্লাকমেইল করা হতো। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বাথরুমে গেলে কৌশলে অভিযুক্তরা তাদের ছবি বা ভিডিও করে তাদের ভয়ভীতি দিয়ে টাকা দিতে বলতো। এদিকে এ বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পেরে এক অভিযুক্তকে আটক করে তার স্কুল ব্যাগ তল্লাশী করলে তার ব্যাগ থেকে একটি ইলেক্ট্রনিক সিগেরেট ও তাতে ব্যবহারের ভ্যাব পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক বলেন, বিষয়গুলো দেখে হত বাক হয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৪২/৩৮৪ ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌরঙ্গ চন্দ্র হালদার বলেন, তারা এ ঘটনায় অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। জেলা প্রশাসকের সাথে বৈকালিক সভার পর এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কঠোরও হতে পারি না। নানা সমস্যা আছে চেষ্টা করব কাটিয়ে ওঠার। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।