উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা মার্কায় ভোট দিন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আবদুল্লাহ আল নোমান//
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তি আবার ক্ষমতায় গেলে দেশ ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাই ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে অপশক্তি পরিহার করে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলার মাটিতে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনের ইজ্জত লুট করেছে, যারা খুন ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তাই তিনি আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে সমবেত জনতার কাছে আহ্বান জানান।
‘বাংলাদশের একটি মানুষও ঘর-বাড়ি ছাড়া থাকবে। কুড়ে ঘরে কেউ বাস করবে না। যাদের ঘর নাই আমরা তাদের ঘর করে দিচ্ছি। যাদের জমি নাই তাদের জমি দিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কা আপনাদের মার্কা। নৌকা উন্নয়নের মার্কা। নৌকা মানুষ, পশুপাখি সবাইকে রক্ষা করে। নূহ নবীর (আ.) সময়েও নৌকা সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। তাই উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা মার্কায় ভোট দিতে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব করেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেনো ডিজিডাল বাংলাদে গড়ে তুলেছি। এখন তারা নিজের ঘরে বসে কাজ পাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে। পদ্মা ও মেঘনা নদী তীরবর্তী জেলা চাঁদপুরের মৎস্যজীবী ও জেলেদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যখন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে তখন আমরা জেলেদের মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেই। তাদের দুর্দশা রোধে আমরা পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন করা তার সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। কেউ গৃহহারা থাকবে না। কমকরে হলেও একটি করে টিনের ঘর করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ভিক্ষুকের জাতির আত্মমর্যাদা থাকে না। আমরা সব জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করবো। বাংলাদেশ হবে ভিক্ষুকমুক্ত। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, কারোর কাছে হাত পাতব না। তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা দেয় তারা এ দেশের উন্নয়ন করবে না। নৌকা আপনাদের মার্কা। এটি উন্নতি সমৃদ্ধি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক মা-বাবাদের বলব, আপনারা সচেতন থাকবেন। কেউ যেন মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে। ২০১৪ সালে আমরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলাম বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। তা যদি হয় তাহলে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই উন্নয়নের রাজনীতি করে, অন্যরা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকামার্কায় ভোট দিলে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জনগণের দোড়গোড়ায় আমরা চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের ঘর নাই, বাড়ি নাই আমরা তাদের বাড়িঘর করে দিচ্ছি। আমরা চাই না দেশের মানুষ ভিক্ষা করে চলুক। এজন্য দেশকে ভিক্ষামুক্ত করার চেষ্টা করছি।
পদ্মা ও মেঘনা নদী তীরবর্তী জেলা চাঁদপুরের মৎস্যজীবী ও জেলেদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যখন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে তখন আমরা জেলেদের মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের উন্নয়ন। আমরা যা যা ওয়াদা করেছি সব কিছু ঠিকমতো পালন করে যাচ্ছি। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার করেন।
জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমদের জন্য টাকা এনে তারা সে টাকা মেরে দিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে মামলা হয়েছে। আমরা সে টাকা সেখান থেকে ফেরত এনেছি।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সন্তান কোথায় যায়, কেন যায় সে বিষয়ে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চান। এজন্য উপস্থিত জনতাকে দুই হাত তুলে অঙ্গীকার করতে বললে জনতাও দুই হাত তুলে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিনের সফরে চাঁদপুর পৌঁছান। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে হাইমচর উপজেলায় পৌঁছে চরভাঙ্গায় ষষ্ঠ কমডেকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য রোভার স্কাউটদের আরো যোগ্য ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি স্কাউটদের উদ্দেশে বলেন, আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে এজন্য তোমাদের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে। যখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তখনো যেন এই মানসিকতা থাকে।
শিশু-কিশোরদের দেশ পরিচালনায় নিজেদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য মমত্ববোধ থাকতে হবে, দেশকে গড়ে তোলার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। আজকে যে শিশু-কিশোররা এখানে, একসময় তোমরাই দেশের কর্ণধার হবে। এ দেশ যেন তোমরা পরিচালনা করতে পারো সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আমি চাই তোমাদের সেবাধর্মী কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি হোক, বিস্তৃতি পাক। সারাদেশে স্কাউট কার্যকম সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, স্কাউটের সুফল দেশের সব পর্যায়ে পৌঁছাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও কমিউনিটিভিত্তিক স্কাউটিং আরো সম্প্রসারণ করতে হবে।
বক্তৃতা পর্ব শেষে কমডেকা পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুনের সঙ্গে কমডেকা ফেস্টুন অবমুক্ত করেন। পরে স্মারক ডাক টিকিট উন্মোচেন করেন তিনি। এরপর হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং উন্নয়নের চেষ্টা তুলে ধরা হয় এই আয়োজনে। আয়োজকরা জানান, আগামী বেশ কয়েকদিন ওই এলাকায় থেকে স্কাউটরা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর পাশাপাশি কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারসহ সামাজিক নানা কাজে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করবে।