স্বরূপকাঠিতে চুরির অপবাদ দিয়ে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা

হযরত আলী হিরু,পিরোজপুর প্রতিনিধি
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে চুরির অভিযোগ এনে এলাকার ইউপি সদস্য নকিতুল¬াহ’র নেতৃত্বে মোস্তফা চৌধুরী (৩২) নামে এক দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন আরামকাঠি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে শুক্রবার নিহত মোস্তফার স্ত্রী রাশিদা বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামী করে নেছারাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মেস্তফার শ্যালক মো. বেল্লাল শেখ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার সময় মোস্তফা সোহাগদলের একতার হাট থেকে তার কাজের টাকা নিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে আরামকাঠি এলাকার মরহুম সত্তার হাওলাদারের বাড়ির কাছে পৌছুলে ওই এলাকার শাহজাহান মোল্লা, নূর জামাল, আফজাল, ইব্রাহীম চৌকিদার, আশ্বাব আলী, রাকিব মিলে মোস্তফাকে সুন্দিরপার ও আরামকাঠি সংযোগ ব্রিজের ওপর ও বাগানের মধ্যে বেদম মারধর করে। এক পর্যায়ে চৌকিদার ইব্রাহীমের নেতৃত্বে তারা মোস্তফাকে আরামকাঠি হাজী ইব্রাহীম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের দোকানে ইউপি সদস্য নকিতুল¬ার কাছে নিযে যায়। সেখানে নিয়েও মোস্তফাকে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে মোস্তফার মা মঞ্জুয়ারা বেগম ও স্ত্রী রাশিদা সেখানে গিয়ে মোস্তফাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীদের হাত পা ধরে কন্নাকাটি করলেও তারা তাতে কেউই কর্নপাত করেনি। এক পর্যায়ে রাত ১ টার সময় বাড়ী থেকে মোস্তফার অসুস্থ পিতা ছোহরাব চৌধুরীকে এনে শর্তসাপেক্ষে সাদা কাগজে পিতা, মাতা ও স্ত্রীর স্বাক্ষর রেখে গুরুতর আহত মোস্তফাকে তাদের কাছে দিয়ে দেয়। গতকাল শুক্রবার সকালে মোস্তফার অবস্থা খারাপ দেখে তাকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হাসান মাসুদ খান তাকে মৃত ঘোষনা করেন। সরেজমিনে আরামকাঠি গ্রামে গেলে ওই এলাকার শাহজাহান মোল্ল¬ার প্রতিবেশি কামরুল হাওলাদারের স্ত্রী জানান, রাত ৯ টার দিকে হঠাৎ ডাকচিৎকার শুনে বের হয়ে জানতে পারন এলাকার শাহজাহান মোল্ল¬ার বাড়ীতে ঘরের দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ পেয়ে শাহজাহান মোল্ল¬া ঘর থেকে বের হরে মোস্তফাকে দৌড়ে যেতে দেখে চোর বলে ডাক চিৎকার দেয়। এতে এলাকার লোকজন বেরিয়ে মোস্তফাকে ধরে মারপিট করে। ইউপি সদস্য নকিতুল্ল¬াহ চুরির অভিযোগ দিয়ে এর আগেও মোস্তফাকে মারধর করেছে। এর পর থেকে মোস্তফা নকিতুল্লাহর বিরুদ্ধে সমালোচনাও করত। এবারের মারধরের সাথে পূর্বের ঘটনার যোগসুত্র থাকতে পারে বলে অনেকের ধারনা। এ বিষয়ে চৌকিদার ইব্রাহমি বলেন শাহজাহানের ফোন পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে তিনি মোস্তফাকে মারধর করতে দেখেন। সেখান থেকে তিনি মোস্তফাকে মেম্বরের কাছে নিয়ে আসেন। তিনি মারেন নি এবং ইউপি সদস্য নকিতুল¬াহ মেরেছেন কিনা তিনি তা দেখেন নি বলে দাবী করেন। ইউপি সদস্য নকিতুল¬াহর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা থেকে ফিরছিলেন। মোবাইলে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে চৌকিদার ইব্রাহিমকে পাঠান। আনুমানিক রাত ১১ টার সময় তিনি আরামকাঠি হাজি ইব্রাহিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দোকানের কাছে আসলে সেখানে মোস্তফাকে আনা হয়। মোস্তফার মা ও স্ত্রীর অনুরোধে তাকে পুলিশে না দিয়ে বাবা, মা ও স্ত্রীর কাছ থেকে মুচলেকা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। মোস্তফাকে নিজে মারধরের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার ওসি মো. মুনিরুল ইসলাম জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য পিরোজপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী শাহনেওয়াজের (নেছারাবাদ-কাউখালী সার্কেল) কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্তের কাজ শেষ করা হয়েছে। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট এবং তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ঘটনা উদঘাটন করা হবে।