Skip to content
এস এম রহমান হান্নান স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামাবাদ, ৩০ জুলাই: ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’। এই স্লোগানেই নওয়াজ শরিফের গদিচ্যুত হওয়ার ‘বিজয় উৎসব’ পালন করল পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে গণসমাবেশে পিটিআই নেতা ইমরান খান শরিফ পরিবারের রাজতন্ত্রের অবসানের ডাক দিলেন। বললেন, ‘পাকিস্তান জিতেছে। নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে আমার কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ৪০ বছর ধরেই তাঁর পরিবারকে চিনি আমি। তিনি আমার কিছু কেড়ে নেননি। কিন্তু তিনি এদেশের মানুষের সঙ্গে অপরাধ করেছেন। ফলে আমরা চেয়েছি তাঁর বিচার হোক।’ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোনও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। এটা আদতে রাজতন্ত্রের মতোই।
সবকিছু ঠিক থাকলে দু’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভাই নওয়াজ শরিফের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই পালাবদলের কারণে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদটি যে ফাঁকা হচ্ছে সেখানে কে আসীন হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল–এন)-এর সূত্রের খবরের ভিত্তিতে পাক সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ছেলে হামজাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে চান শাহবাজ। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পদটি পরিবারের হাতে রেখে দেওয়ার জন্যই যে শাহবাজ ছেলেকে স্থলাভিষিক্ত করতে চাইছেন তা নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের পর যেন পাঞ্জাব সরকারের সঙ্গে স্বস্তিতে কাজ করা যায় সেকারণেও হামজাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত কে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নওয়াজের উপরই। পিএমএল–এন এক নেতা জানান, শাহবাজ পরোক্ষভাবে পাঞ্জাবের বিষয়গুলি তদারকি করবেন। আর নিজের বাসভবনে বসে হয়তো পিছন থেকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করবেন গদিচ্যুত নওয়াজ। এদিকে নওয়াজ নিজের ছোট ভাই শাহবাজকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছোটভাইকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে নওয়াজ রাজতন্ত্রের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইছেন।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটির জন্য পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন ১ আগস্ট অধিবেশনের ডাক দিয়েছেন। শুধু অন্তবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়টিই রয়েছে ওইদিনের অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে। আগামী মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে পারে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বগ্রহণের আগে পর্যন্ত (অন্তত ৪৫ দিন) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে থাকবেন।
সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় নাম এসেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক, পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খানের। তবে সব গুঞ্জনের অবসান ঘটে নওয়াজের দল পিএমএল–এনের বৈঠকের পর।
প্রাক্তন পেট্রলিয়ামমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষের প্রার্থী হিসাবে আওয়ামি মুসলিম লিগের সভাপতি শেখ রশিদ আহমেদকে সমর্থন করেছে ইমরান খানের দল তেহরিক–ই–ইনসাফ। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কিংবা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরোধী দল প্রার্থী দিলেও তা কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই নওয়াজের দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তার দলের প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।