কমলগঞ্জে চা শিল্পের বাড়াইক জনগোষ্ঠির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

জয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ

চা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মধ্যে বাড়াইক একটি জনগোষ্ঠি। এই বাড়াইক জনগোষ্ঠির উদ্যোগে নিজেদের অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা, মাদক ও কুসংস্কার মুক্ত সুস্থ সমাজ গঠনের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ বাড়াইক সমাজ কল্যাণ পরিষদ (বাসকপ)-এর আয়োজনে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে চা শ্রমিক বাড়াইক সম্প্রদায়ের লোকজন এসব দাবি তোলে ধরেন। রবিবার বিকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিরতিংগা চা বাগানের দুর্গামন্দির নাটমন্ডপে দেশের বিভিন্ন চা বাগান থেকে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশ বাড়াইক সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অলমিক সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মহাসচিব সিতারাম অলমিক, বাংলাদেশ মৃধা সমাজ কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব সুনীল কুমার মৃধা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, স্থানীয় ইউপি সদস্য ধনা বাউরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাসকপ এর সাধারণ সম্পাদক চরণ বাড়াইক।

সিলেট চা জনগোষ্ঠী ছাত্র ও যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত বাড়াইক এর পরিচালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শাহীন আহমেদ, পিন্টু দেবনাথ, মোশাহীদ আহমদ, আব্দুল বাছিত খান, লেখক শ্যামল বর্মা, কম্পাউন্ডার দিপন বাড়াইক, শ্রমিক নেতা দিলীপ ঘোষ প্রমুখ। আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দরা বলেন, অবহেলিত চা বাগানে ক্ষুদ্র জাতি গোষ্টি শিক্ষা, চিকিৎসা সহ নিজেদের অধিকার আদায়ে প্রত্যেকে ভূমিকা রাখতে হবে। তাছাড়া সময়ের পরিক্রমায় ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধারন করে নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই। নেতৃবৃন্দরা বলেন, চা বাগানে দীর্ঘকাল থেকে মাদকের ব্যবহার ও কুসংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই মাদক ও কুসংস্কার মুক্ত সুস্থ, সুন্দর সমাজ গঠন এবং শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকল সম্প্রদায়ের লোকজনকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাড়াইক সমাজের পক্ষ থেকে অতিথি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাড়াইক সমাজের নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বাড়াইক সম্প্রদায়ের শিল্পীরা তাদের নিজস্ব গীত নিয়ে সঙ্গীত ও গীতি নাট্য পরিবেশন করেন। সম্মেলনে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে হবিগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গলের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করেন।