চাতলাপুর-মৌলভীবাজার ও শমশেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়কের খানা খন্দে ভরপুর

জয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ

মৌলভীবাজারের চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন-শমশেরনগর-মৌলভীবাজার ও শমশেরনগর-কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল এবং নছিরগঞ্জ-শমশেরনগরে কয়েক মাসের বৃষ্টিপাত আর যানবাহনের চাপে সড়ক গুলি ভেঙ্গে খানাখন্দে ভরপুর হয়ে উঠায় দুভোর্গে পড়েছে জনসাধারন। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলি দীর্ঘদিন ধরে খানা খন্দে গর্ত হওয়ায় বিকল হচ্ছে যানবাহন। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। প্রায় দুই সহ¯্রাধিক গর্তের উপর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় এই দুটি সড়কে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে মৌলভীবাজার ও শমশেরনগর-শ্রীমঙ্গল এবং নছিরগঞ্জ-শমশেরনগর পর্যন্ত সড়ক এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা সদর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর হয়ে কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরের সাথে যুক্ত হয়েছে সড়কটি। ভারতের সাথে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে এই সড়কটি ব্যবহৃত হচ্ছে। চাতলাপুর চেকপোষ্টের মাধ্যমে যাত্রীরাও দুই দেশে যাতায়াত করে থাকেন। সড়কটি জেলা সদরের সাথে কমলগঞ্জ উপজেলা ও কুলাউড়া উপজেলার সাথেও রয়েছে যোগাযোগ। গত কয়েক মাসের টানা বৃষ্টিতে ৩৪ কি.মি. দীর্ঘ এ সড়কের প্রায় সহ্রসাধিক স্থানের পিচঢালা উঠে দুই ইঞ্চি গভীর পরিমাণে গর্তের সৃষ্টি হয়। যাত্রীবাহি ও মালামাল পরিবহনকারী ট্রাক-কভার্ড ভ্যান চালাতে হয় রীতিমত ঝুঁকি নিয়ে। চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে মৌলভীবাজার জেলা সদরে ৩৪ কি.মি. যেতে সময় ব্যয় হত ৫০ মিনিট। এখন সময় লাগে দেড় ঘন্টার উপরে।

এদিকে শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ-শমশেরনগর হয়ে সড়কটি কুলাউড়া উপজেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। দেশী বিদেশী পর্যটকরা এ সড়ক ব্যবহার করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, কুলাউড়া হয়ে বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত পরিদর্শনে যান। শমশেরনগর বিমান বন্দর এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ২১ কি.মি. নছিরগঞ্জ-শমশেরনগর পর্যন্ত ১২ কি.মি. সড়কের অসংখ্য স্থানের পিচঢালা উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ি এলাকায় সড়কের পার্শ্ববর্তী অনেক স্থানে মাটি সরে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কটি।

সিএনজি অটোরিক্সা চালক শিমুল মিয়া, মশাই মিয়া, মাইক্রোবাস চালক জসিম উদ্দীন, পিকআপ চালক নেছার মিয়া সহ যানবাহন চালক ও যাত্রীরা বলেন, এত খারাপ সড়কে যানবাহন চালানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে গর্তে পড়ে মাঝে মাঝে অনেক যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যায়। আর প্রতিনিয়ত বিকল হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সড়ক দুটি সংস্কার না করায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে এখন যান চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ছে। যাত্রীদের ধারণা সড়ক দুটির কোন অভিভাবকই নেই। অথচ প্রতিদিন গড়ে ছোট বড় মিলিয়ে কয়েক সহ¯্রাধিক যানবাহন এ দুটি সড়কে চলাচল করে। মালামাল পরিবহন ছাড়াও সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগের শিকার রোগীবাহী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স। রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌছার আগেই সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী যাত্রীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কের বেহাল দশা হলেও সড়ক জনপথ বিভাগ এ দিকে কোন নজরই দিচ্ছে না। অবস্থা দেখে বলতে হচ্ছে আসলে এ সড়কের কোন অভিভাব নেই। শমশেরনগর-কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক ব্যবহারকারী শমশেরনগর এর ব্যবসায়ীরা বলেন, শ্রীমঙ্গল পাইকারী হাট থেকে প্রতিদিন ভোরে ঝুঁকি নিয়ে ৮ থেকে ১০ পিকআপ শাক সবজি এবং শনি ও মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলের পাইকারী হাট থেকে একাধিক ট্রাকবাহী মুদী সামগ্রী ঝুঁকি নিয়ে আসে। আমদানী রপ্তানিকারক ক্লিয়ারিং এজেন্ট রমাপদ সেন বলেন, অসংখ্য গর্তের উপর দিয়ে পণ্য সামগ্রী নিয়ে ট্রাক সমূহ যাতায়াত করে। কখন মালামালসহ ট্রাক উল্টে পড়ে সেটিই আশঙ্কা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সড়কের বেহাল দশার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এখন সড়কের গর্তগুলি সাময়িকভাবে ইটের খোয়া দিয়ে ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারে জরুরী ভিত্তিতে প্রস্তাবনা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবারে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া মৌলভীবাজার সড়কের এক কি.মি. ও শমশেরনগর বাজারের শ্রীমঙ্গল সড়কের দু’পাশে শীঘ্রই কাজ করা হবে।