গৌরনদীতে উপবৃত্তির তালিকা থেকে হিন্দু শিক্ষার্থীর নাম বাদ দেয়ায় ঘটনা তদন্তকালে একাডেমিক সুপাপরভাইজার অপদস্ত

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ১১টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেনীর উপবৃত্তির তালিকা থেকে সিংহভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের নাম বাদ দেয়ার ঘটনা তদন্তে আসা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে গতকাল সোমবার সকালে নিজেকে রক্ষায় নানা প্রকার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম মিয়া। এ সময় একজন প্রধান শিক্ষক কর্তৃক উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌরাঙ্গ প্রসাদ গাইন অপদস্ত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীগনসহ তদন্ত কাজে আসা ওই দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যগনও এ ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
জানাগেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম মিয়া তার নিজ উদ্যোগে উপজেলার ১১টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলতি বছরের উপবৃত্তির তালিকা থেকে সিংহভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীর নাম কেটে বাদ দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হন ওই ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগন। তারা এ ঘটনাকে ওই কর্মকর্তার সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছেন। পরে ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগন গত ৭ ডিসেম্বর সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) যুগ্ন প্রোগ্রাম পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে লিখিত অভিযোগ পাঠান।
এ ঘটনা ১০ ডিসেম্বরের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল এর উপ পরিচালক (কলেজ) মোঃ আবদুস মেলিমকে প্রধান ও সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) মোঃ এবাদুল ইসলামকে সদস্য করে গত ২ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির ওই দুই সদস্য গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ঘটনার সরেজমিন তদন্তে গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন। এর পূর্বে অভিযোগকারী ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান গনকে তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়। যথা সময়ে তারা সেখানে উপস্থিত হন।
অপর দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অফিসার মোঃ সেলিম মিয়া একই সময় তদন্ত কমিটির সামনে উপজেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা সমুহের প্রধানদের জড়ো করেন। তাদেরকে দিয়ে তিনি তদন্ত কমিটির সদস্যদের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন শিক্ষকদের দুটি অংশ। তখন সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। শিক্ষকরা শিক্ষা অফিসের বারান্দায় বসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আসেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌরাঙ্গ প্রসাদ গাইন। তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হন টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মফিজুর রহমান। তিনি একাডেমিক সুপারভাইজারকে ধমকিয়ে অপদস্ত করেন। এ ঘটনায় তখন উপস্থিত শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীগনসহ তদন্ত কাজে আসা ওই দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যগনও বেশ ক্ষুব্ধ হন। পরে তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল এর উপ পরিচালক (কলেজ) মোঃ আবদুস মেলিম শিক্ষকদের বেড়িয়ে ক্ষুব্দ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ মূলক কথা বলে তাদেরকে শান্ত করেন। এরপর অভিযোগকারী ৭ শিক্ষককে সেখানে রেখে বাকি সবাইকে বিদায় দিয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন।
উপবৃত্তির তালিকা থেকে সিংহভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের নাম বাদ কে বাদ দিয়েছেন। তদন্তে তা পাওয়া গেল কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল এর উপ পরিচালক (কলেজ) মোঃ আবদুস মেলিম বলেন, আমরা অভিযুক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিযোগকারী শিক্ষক গনের সাথে কথা বলেছি। এর পর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, কে উপবৃত্তির তালিকা থেকে সিংহভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের নাম কেটে বাদ দিয়েছে। এর আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।