অসময়ের বৃষ্টি হওয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে ধান আলুসহ শাক-সবজির ক্ষতি

জয়নাল আবেদীন,মৌলভীবাজার সংবাদদাতা

বৈরী আবহাওয়া আর অসময়ে তিন দিনের টানা বৃষ্টিপাতে ধান, গবাদি পশুর খাবার খড় বিনষ্ট হওয়ায় আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বছর জুড়ে বৃষ্টি, বন্যা, জলাবদ্ধতায় ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নি¤œচাপের কারনে শুক্রবার রাত থেকে মৌলভীবাজারের সকল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসময়ে বৃষ্টিপাতে এসব ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানা।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে মাঠ থেকে পাকা ধান কাটার মহৌৎসবে মেতে উঠেন। কৃষকরা মাঠ থেকে প্রায় ষাট শতাংশ ধান কেটে বাড়িতে তোলেছেন। কেউ মাড়াই দিয়ে ধান বের করেছেন, কেউ মাড়াই দেবার অপেক্ষায় সময় গুনছেন। কেউ কেউ ধান সিদ্ধ করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সময়ে কৃষকরা মাঠ থেকে ধান কাটা ও ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত ঠিক এই সময়ে কাটা ও সিদ্ধ করা ধান নিয়ে অসময়ের টানা বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ধানে জটলা বেঁধে দুর্গন্ধ দেখা দিয়েছে। ঘরে, উঠানে ও খলায় ধান এবং গবাদি পশুর খাবারের মাড়াই করা ধান গছের খড় নষ্ট হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর আমন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৭ হাজার ২শ’ হেক্টর। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় সতেরশ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ হয়েছে। তবে অসময়ে অবিরাম বর্ষনের কারনে কিছু আমন ফসল ও শাক-সবজির ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শমশেরনগরের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান, হাজীপুরের শওকত আলী, মইনুল ইসলাম মিনার, আব্দুল হান্নান, বলেন, এবছর বৃষ্টিপাত, বন্যা আর জলাবদ্ধতায় কৃষকরা বোরো, আউশ ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আমন ফসল ঘরে তোলার এই অসময়ে বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে থাকা ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানির সাথে গাছ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। নিচু জমিতে পানি জমায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধান কাটার পর মাড়াই দেয়া ও সিদ্ধ করা ধান ঘরে থাকায় সেগুলোতেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

কৃষক ফয়জুর রহমান ফজির বলেন, টানা বৃষ্টিতে আলু চাষে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও টমেটো, ফরাস, সরিষা, পুঁইশাক, লাল শাক, লাই শাক সহ শীতকালীন শাক-সবজিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধাপে ধাপে ফসল ও সবজি ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক হারুনুর রশীদ জানান, শনিবার ২২ মিলিমিটার এবং রবিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষিকর্মকর্ত গোপাল দেব বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারনে চতুর্দিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাটা ধান ও আলুসহ শাক-সবজির ক্ষতি সাধন হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে নি¤œচাপ জনিত কারনে টানা বৃষ্টিপাতে কৃষকদের কিছু আমন ধান ও কিছু শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।