গৌরনদীর কলেজ ছাত্র সাকির হত্যাকান্ড থানা থেকে আসামী ছেড়ে দেওয়ায় স্বজনদের ক্ষোভ

গৌরনদী সংবাদদাতা
বরিশালের গৌরনদীর কলেজ ছাত্র সাকির হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার ৫ দিন পরেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে এ মামলার ১ জন আসামীকে আটকের পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ায় নিহতের স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এনিয়ে এলাকায় চলছে চরম উত্তেজনা। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গত ২ দিনে আসামীদের বাড়ী-ঘর ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কয়েকদফা হামলা ও ভাংচুরসহ মহাসড়ক অবরোধ ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে নিহত কলেজ ছাত্র সাকিরের স্বজন, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। জানাগেছে, থানা থেকে আসামী ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ হন বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এ কারণে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধŸতন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সাকিরের মা আলেয়া বেগম ও বড় ভাই জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ঘটঁনার পরপরই স্থানীয়রা সাকিরের উপর হামলাকারী ও হত্যা মামলার ৬ নং আসামী ফাহিম (১৮) কে ঘটঁনাস্থল থেকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। গৌরনদী থানার এসআই সামসুদ্দীন ফাহিমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশের একটি একটি সূত্র জানায়,ফাহিমকে ধরে আনার ঘটঁনায় ক্ষুব্ধ হন গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। ওসি আসামী ফাহিমকে ছেড়ে দিতে বললে এসআই সামসুদ্দীন তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। গত ২২ নভেম্বর পালরদী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মানববন্ধন চলাকালিন সময়ে সেখানে পরিদর্শনে আসেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মফিজুল ইসলাম (মিঠু) । এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সাকির হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত ফাহিমকে আটক করে থানায় ধরে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটঁনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে গৌরনদী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এদিকে গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে গৌরনদীর আসোকাঠি গ্রামে নিহত কলেজ ছাত্র সাকিরের কবর জিয়ারাতের উদ্দেশ্যে এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করতে তার বাড়ীতে যান বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. তালুকদার মোঃ ইউনুস। এ সময় নিহতের মা আলেয়া বেগম ও পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে সাকির হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ফাহিমকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর কাছে অভিযোগ করেন। বিষয়টি জেনে এমপি ক্ষুব্ধ হন এবং দ্রুত সাকির হত্যা মামলার সব আসামীকে গ্রেফতারের আশ্বাষ দেন। এর পর থেকে পুলিশের উর্ধ্বতন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে,গত ২১ নভেম্বর সকালে স্থানীয় বখাটে সোহেল গোমস্তা (২৮),ইলিয়াছ খান (২২), সুমন হাওলাদার (২৩) ও এমরান মির (২০),ফাহিম সহ ্অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জন বখাটে যুবক কলেজ ক্যাম্পাসে এসে পালরদী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন কুমার রায়কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সাকির এর প্রতিবাদ জানালে বখাটেরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ওইদিন দুপুরে পরিক্ষা শেষে বাড়ী যাবার উদ্দেশ্যে শাকির কলেজের গেটের সামনে বের হলে ওই বখাটেরা ক্রিকেটের ব্যাট ও লাঠিসোটা দিয়ে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে তার মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে বরিশাল শেরইবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরবর্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। বুধবার গভীর রাতে সাকির মারা যায়। এ ঘটনায় সাকিরের মা আলেয়া বেগম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেণ। কিন্তু গত ৫ দিনেও কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সাকির হত্যা মামলার আসামী ফাহিমকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফাহিমকে ছেড়ে দেয়া হয়নি, সে থানা থেকে পালিয়ে গেছে। সে নবম শ্রেনীতে পড়ে, তার পড়নে স্কুলের ইউনিফরম থাকায় তাকে হাজতে রাখা হয়নি। এ ছাড়া ওই দিন বিএনপির গ্রেফতারকৃত ৬১ জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে আমরা মহাব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। এ কারণে সে পালানোর সুযোগ পেয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে বলে ওসি জানান।