গৌরনদীতে কলেজ ছাত্রের হত্যাকারীদের বাড়িঘর দোকানপাটে নিহতের স্বজন ও থিক্ষার্থীদের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের চেষ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন

গৌরনদী প্রতিনিধি
বরিশালের গৌরনদীতে বখাটের হামলায় কলেজ ছাত্র শাকির গোমস্তার মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হত্যা মামলার আসামীদের বাড়িঘর, দোকান পাটে হামলা ভাংচুরসহ অগ্নি সংযোগের চেষ্টা চালিয়েছে। এ সময় এক এইচ,এস,সি পরীক্ষার্থীনি ছাত্রীকে লাঞ্চিত করাসহ তার অলঙ্কার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অভিযোগে জানাগেছে, উপজেলার পালরদী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তপন কুমার রায়কে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজের প্রতিবদ করতে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ও উপজেলার আশোকাঠী গ্রামের আইয়ুব আলী গোমস্তার ছেলে শাকির গোমস্তা তাদের প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের ইউসুফ গোমস্তার বখটে ছেলে সোহেল গোমস্তা ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হয়। হামলাকারীরা গাছের গুডি দিয়ে শাকিরের ঘাড় ও মাথায় আঘাত করে এতে শাকিরের ঘাড় ও মাথায় মাতাতœক যখম হয় এবং সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত যখম ও অজ্ঞান অবস্থায় সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা ওই দিন বিকেলে সড়কপথে এ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে ঢাকায় নিয়ে রওনা হন। মঙ্গলবার বিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পৌছলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগন তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় স্বজনরা তার লাশ নিয়ে এলাকায় পৌছে। এ সময় ওই বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কান্নায় সেখানকার বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। রাত ১০টায় জানাজা শেষে তার লাশ আশোকাঠী গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গেটে জড়োহয়ে হত্যা মামলার আসামীদের এলাকার শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা ওই এলাকার সবুজ গোমস্তার ছেলে নবম শ্রেনীর ছাত্র শাকিল গোমস্তা (১৪) কে মারধোর করে। শিক্ষকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছলে হামলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর গৌরনদী মডেল থানার এস,আই আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে তারা পুর্ণরায় জড়ো হয়ে হত্যা মামলার অপর আসামী সুমন হাওলাদারের চায়ের দোকান ভাংচুর ও তছনছ করে। এরপর তারা হত্যা মামলার প্রধান আসামী সোহেল গোমস্তা, ৩ নং আসামী ইলিয়াস খান ওরফে লিয়াচ খানের বাড়িতে চড়াও হয়ে ওই দুই আসামীর বসত ঘরসহ ওই বাড়ির মোট ৩টি ঘরসহ মালামাল ব্যাপক ভাংচুর ও তছনছ করে। এ সময় তারা কেরোসিন ও পেট্রল দিয়ে অগ্নি সংযোগ করে ঘর তিনটি পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌছে ধাওয়া করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে কে, বা কারা গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে অগ্নি সংযোগের খবর দেয়। এ খবরে ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখেন অগ্নিসংযোগের খবর সঠিক নয়।
হত্যা মামলার ৩ নং আমামী ৩ নং আসামী ইলিয়াস খান ওরফে লিয়াচ খানের মা মুকুল নাহার অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তার বসতঘরসহ মালামাল ভাংচুর ও তছনছ করার সময় তার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীনি নুসরাত জাহান ডালিয়াকে লাঞ্চিত করে ও তার গলায় থাকা স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার পর বিক্ষুব্ধরা বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের আশোকাঠী বাসষ্টান্ড এলাকায় জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে কলেজ ছাত্র শাকির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছে তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা তাদের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। অবরোধকালে প্রায় ২০ মিনিট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকে কয়েকশত যানবাহন আটকা পড়ে। ক্ষনিক সময়ের ভোগান্তির শিকার হন দুরপাল্লার যাত্রীরা।
এরপর স্কুল এ্যান্ড কলেজটির ক্যাম্পাসে আসেন গৌরনদী পৌর মেয়র মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান, তিনি ঘটনার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে বিক্ষুব্ধরা শান্ত হন।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, অতি দ্রত সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করা হবে।