মরনমুখি রাসায়নিক প্রযুক্তিকে কৃষিজ উৎপাদন থেকে বিদায় দিতে হবে

মো: আহছান উল্লাহ
বর্তমান বিশ্ব আধুনিক বিশ্ব। এক কথায় বলা যায় বিজ্ঞানের যুগ, সেমতে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন। বিজ্ঞান বহু অজানাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক একজন অনুসদ্ধিৎসুর এক একটি আবিষ্কারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে সকলের জন্য। মানুষের মেধার ফসল সকল মানুষ ভাগ করে নেবে এটাইতো নিয়ম হওয়া উচিত। বিদ্যুত, বেতার তরঙ্গে বার্তা প্রেরন, আকাশ পথে চলাচলের যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলোর সুফল, যে কোন জাতি যে কোন দেশই পেতে পারে। আর এ সবকিছুরই কৃতিত্ব বিজ্ঞানীদের। বহু যুগ যুগান্তর ধরে যে চিত্রটি ভেসে আসে তাহলো এক নিঃসঙ্গ সাধকের মত আহার নিদ্রা ব্যক্তিগত সুখ সাচ্ছন্দ্য ভুলে যারা মানুষের উপকারের জন্য জ্ঞান সাধনা করে ছিলেন। এখন অবশ্য সে ভাবে বিজ্ঞান সাধনা করা হয় না। এখন সব প্রতিষ্টান অন্তর্গত। বিজ্ঞানের জয়জয়কার হলেও আমাদের দেশে প্রকৃতি নিয়ে এখনও তেমন কোন প্রতিষ্ঠান বা গবেষনাগার গড়ে উঠেনি। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যাহা ব্যক্তি নির্ভর এবং বানিজ্যিক। অবশ্য তার একটি উদাহরন এখানে দেয়া যেতে পারে, যেমন সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর ভেষজ বাগান প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়া। অথচ আমাদের চারপাশে যে প্রকৃতি, যে পরিবেশ আর যে প্রতিবেশ তার মায়ায় আমরা বেড়ে উঠি। প্রকৃতির সন্তান মানুষ। নগর সভ্যতার অনিবার্য বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতিকে দুরে ঠেলে, আচার-আচরন, আহার-বিহার, বসন ব্যসনে কৃতিমতাকে নির্ভর করতে শুরু করেছে মানব সম্প্রদায়। আর এ সবের ফলে মানব ও প্রকৃতির স্বাভাবিক আত্মিয়তা বিনষ্ট হচ্ছে রোগ শোক আর জরাজির্নতা মানব জীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। তাই বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষ আবার বোধ করেÑপ্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়াটাই হবে মানুষ, মানবতা, মানব সভ্যতা, মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সর্বোতকৃস্ট উপায়। পৃথিবীতে প্রথম প্রানের আবির্ভাব হয় পানিতে আর স্থলের আদি বাসিন্দা উদ্ভিদ আর এ জন্যই মাছ ও জলজ প্রানি এবং গাছ-পালা, তরু লতা-পাতার কাছে আমরা ঋনি। কেননা তারা আমাদের আদি বাসিন্দা যে কারনে তারা আমাদের সমীহ দাবী করতে পারে। পৃথিবীতে মানুষ বাদে যত জীববস্তু আছে। এদের অধিকাংশই অনুভব করে লতা-পাতা ঘাস ছারা তারা বাঁচতে পারেনা। মানুষের মতো তারা চিন্তাশীল নয় বলে অনুভবটা তারা ধরে রাখতে পারে না। আর এজন্য মানুষ কিন্তু বিপদমূক্ত। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী যদি চিন্তাশীল হতো তাহলে মানুষ সবার ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে পারতো কিনা সন্দেহ ছিল। আর পারলেও তা খুব সহজ হতোনা। কেননা মানব জাতির বিভিন্ন গোত্র বর্নর হিংসা হানাহনি তার প্রকৃষ্ট উদাহরন। উদ্ভিদ, গাছ-পালা, লতা-পাতার ওপর সম্পূর্ন নির্ভরশীল হয়েও মানুষ যদি তা স্বীকার না করে তাহলে অকৃতজ্ঞ বা অজ্ঞ বলা কী বেশী হবে ? এরা যদি মানুষের মতো কথা বলতে পারত, অনুভব করতে পারত, ভাবতে পারত তাহলে তারা আমাদের আনুগত্য ও সমীহ আদায় করে নিত। তাই কৃষি ক্ষেত্র থেকে কীটনাশক, বালাই নাশক, রাসায়নিক সার ব্যবহারে জিন-প্রযুক্তির উচ্চ ফলনশীল শস্য পৃথিবীব্যাপী পরিতাজ্যের তালিকায় চলে যাচ্ছে। রোগে শোকে মানুষ প্রচলিত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার পরিবর্তে বিকল্প ভেষজ চিকিৎসার দারস্ত হচ্ছে। সে কারনে এখন দুনিয়া জুরে জৈব কৃষি অর্গানিক খাবার, আর ভেষজ চিকিৎসার বিজয় কেতন উড়ছে নতুন করে। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান কারণ মানবদেহে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সকল ভেষজ বৃক্ষ, লতা, গুল্মর অবারিত জন্ম হয় বাংলাদেশের মাটিতে। আমাদের দেশের মানুষের প্রয়োজন শুধু এ সব গাছ-পালা, লতা-পাতা, ফুল-ফল চিনে নেওয়া এবং আমাদের কৃষকজনকে আদি অকৃতিম প্রাকৃতিক জৈব চাষাবাদে ফিরিয়ে নেওয়া পাশাপাশি মরনমুখি রাসায়নিক প্রযুক্তিকে কৃষিজ উৎপাদন থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া। এ কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু একটি পদক্ষেপ। কেবলমাত্র উদ্বুদ্ধকরন। এ ক্ষেত্রে সরকার ও এনজিও গুলোর জবাবদিহিতা মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের যে সমস্ত কর্তা ব্যক্তিরা কাজ করছেন তাদের সাথে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে বন্ধু সুলভ ও সম্পর্ক গড়ে তোলা। জৈব প্রযুক্তির কৃষির পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান করে ভেষজ বৃক্ষকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের আওতায় নিতে পারলে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। সেহেতু পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে জনসংখ্যা আপত হয়না সম্পদ হয়।