গৌরনদীতে একই নারীর দুটি মৃত্যু সনদ, ইউপি সচিবসহ তিন জনের বিরুদ্ধে প্রতারনা ও জ্বালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের

গৌরনদী প্রতিনিধি
বরিশালের গৌরনদীতে এক ইউপি সচিব ও গ্রাম পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের শারীরিক অসুস্থ্যতার সুযোগে প্রতারনা ও জ্বালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জনৈকা মৃত নারীর নামে ২টি মৃত্যু সনদ তৈরী করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারনা ও জ্বালিয়াতির অভিযোগে ওই ইউপি সচিব ও গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ তিন জনের বিরুদ্ধে সোমবার বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আদালত সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার ৩নং চাঁদশী ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে চিত্ত সোমবার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ওই ইউপির সাবেক সচিব অবিনাস বাড়ৈ সৌরভ, উপজেলার উত্তর নাঠৈ গ্রামের গ্রাম পুলিশ সদস্য সন্তোষ কুমার দাস ও সৈয়দ মনজুকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিচারক মামলার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বরিশালের ডিবি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।
চেয়ারম্যানের অভিযোগ ও মামলার আরজি সুত্রে জানাগেছে, ওই ইউনিয়নের উত্তর নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ জবেদ আলীর স্ত্রী মৃত সৈয়দা হালিমন নেছা ১৯৮৭ সালের ৪ মার্চ মৃত্যু বরন করেন। যা উপজেলার ৩নং চাঁদশী ইউপির ১৯৮৭ সালের মৃত্যু রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ আছে। ওই নারীর মৃত্যু সনদপত্র পেতে একই গ্রামের সৈয়দ মনজু এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে চাঁদশী ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে চিত্ত’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রেজিষ্টার দেখে সে অনুযায়ী মৃত সৈয়দা হালিমন নেছা’র মুত্যু তারিখ ০৪-০৩-১৯৮৭ ইং লিখে গত ০৮-০২-২০১৭ইং একটি মৃত্যু সনদপত্র দেন।
এরপর অবৈধভাবে লাভবান হতে সৈয়দ মনজু তার চাচি সৈয়দা হালিমন নেছা মৃত্যুর তারিখ পরিবর্তন করে মৃত্যু সনদপত্র পেতে ওই ইউপির তৎকালীন সচিব অবিনাস বাড়ৈ সৌরভ ও উপজেলার উত্তর নাঠৈ গ্রামের গ্রাম পুলিশ সদস্য সন্তোষ কুমার দাসের সাথে গোপনে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের পরস্পর যোগ সাজসে বিগত ০২-১১-১৯৮০ ইং সৈয়দা হালিমন নেছা মৃত্যু বরন করেছেন উল্লেখ করে সৈয়দ মনজু গত ০৫-০১-২০১৭ ইং চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আবেদন করেন। চেয়ারম্যান উপজেলার উত্তর নাঠৈ গ্রামের গ্রাম পুলিশ সদস্য সন্তোষ কুমার দাসকে আবেদনটির ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেন দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে চিত্ত শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তার অসুস্থ্যতার সুযোগে অভিযুক্ত সচিব ও গ্রাম পুলিশ সদস্য মিলে পরস্পর যোগসাজসে ইউপির ১৯৮৭ সালের মৃত্যু রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ সৈয়দা হালিমনন্নেছার ০৪-০৩-১৯৮৭ ইং এর মৃত্যুর তারিখটির স্থলে কাটাছেড়া করে ০২-১১-১৯৮০ ইং লিখে রাখে। এরপর ওই ০২-১১-১৯৮০ ইং তারিখে সৈয়দা হালিমনন্নেছার মৃত্যু হয়েছে দেখিয়ে গত ১৮-০৪-২০১৭ ইং হালিমন নেছার নামে অপর একটি মৃত্যু সনদপত্র তৈরী করে চেয়ারম্যানের সামনে উপস্থাপন করেন। অসুস্থ্য চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে চিত্ত সেটিকে স্বাক্ষর করে দেন।
এরপর সচিব অবিনাস বাড়ৈ সৌরভ অন্যত্র বদলী হয়ে যান। তার স্থলে সম্প্রতি দায়িত্ব নেন উপজেলার মাহিলাড়া ইউপির সচিব মোঃ মাহতাব হোসেন। বিয়য়টি তার নজরে এলে তিনি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে চিত্তকে অবহিত করেন। এ নিয়ে দীর্ঘ দেন দরবারের পর চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে চিত্ত অবশেষে আদালতের দ্বারস্ত হলেন।