পিরোজপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে সুন্দরবনের দু’ই জলদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

হযরত আলী হিরু,পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
পিরোজপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দু’টি জলদস্যু গ্রুপের ২০ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। বুধবার (১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় পিরোজপুর জেলা ষ্টেডিয়াম মাঠে র‌্যাব-৮ ’র উইং কমান্ডার হাচান ইমন আল রাজিবের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় । সুন্দরবনের মাঞ্জু বাহিনী ও মজিদ বাহিনীর ২০ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৩টি আগ্নেআস্ত্র ও ১৩২৯ রাউন্ড গুলি সহ র‌্যাব-৮ এর কাছে স্বেচ্ছায় আতœসমর্পন করে। এ বাহিনী দু’টি এতদিন সুন্দরবনের মংলা ও দাকোপ এলাকায় ডাকাতিতে লিপ্ত ছিল। আতœসমার্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল, পিরোজপুর জেলা প্রশাসক শেখ খায়রুল আলম, পিরোজপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, পিরোজপুর পুলিশ সুপার মোঃ ওয়ালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দস্যুতা ছেড়ে আপনাদের সবাইকে আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি। সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখতে এবং জেলেরা যাতে নির্বিঘেœ মৎস্য আহরণ করতে পারে সেজন্য প্রশাসন যেকোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে। আপনারা যদি সেচ্ছায় দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসেন তাহলে হয়ত একদিন প্রশাসনের হাতে নয়ত আপনাদের নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের হাতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে প্রাণ দিতে হবে। আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না এসে সুন্দরবনে ত্রাস চালালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। অনুষ্ঠানে জলদস্যুরা সরাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে আগ্নেঅস্ত্র জমা দিয়ে আতœসমার্পন করেন। আতœসমর্পন করা জলদস্যুরা হলেন- আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুরা হলেন, “মানজু বাহিনীর” জলদস্যু প্রধান মো. মানজু সরদার (৪৪), জুলফিকার ইজারদার (৪৬), মো. বাচ্চু মল্লিক (৩২), মো. তৌহিদুর রহমান শেখ (৫০), মো. রেজাউল ইসলাম (২৫), মো. পলাশ খান (৩৪), মো. সুময়ানমান ফকির (২৫), মো. জামরুল শেখ (৩০), মো. মজিব ইজারাদার (৩২), মো. হাওলাদার আলমগীর (৩৮), মো. হানিফ শেখ (৩২)। “মজিদ বাহিনীর” প্রধান মো. তাকবির কাগচী মজিদ(৩৮), মো. হাসান বিশ^াস (৩৯), মো. আব্দুল মজিদ (৩০), মো. ইউনুছ শেখ (২৪), মো. হাফিজুল ইসলাম (৩২), মো. আফজাল খাঁন(৩৫), মো. এসকেন খাঁন (৪০), মো. হাসান আলী ইজারদার (৩২), মো. মোসা ইজাদ্দার (৩৩। এদের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপাল ও মংলা থানায়। আত্মসমর্পণের সময় ১১টি বিদেশী একনালা বন্দুক, সাতটি বিদেশী দোনালা বন্দুক, পাঁচটি ২২ বোর বিদেশী এয়ার রাইফেল, ছয়টি ওয়ান শুটারগান ও চারটি কাটা রাইফেলসহ ৩৩টি দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৩২৯ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সময় আরও ১২টি বাহিনী স্বেচ্ছায় র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। গত দু’বছরে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট ও মংলায় জলদস্যু গ্রুপের বিভিন্ন সদস্য অস্ত্রসহ স্বেচ্ছায় র‌্যাবের কাছে ধরা দেয়। স্বাভাবিক জীবন-যাপনের প্রতিশ্রুতিতে ধরা দেয়ায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় অধিকাংশ জলদস্যুদের সরকার পুর্নবাসনের জন্য ইতিমধ্যে অর্থ সাহায্যসহ বিভিন্ন সহায়তা করছে। তবে হত্যাসহ গুরুতর অপরাধের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমার বাইরে রাখা হচ্ছে।উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে সুন্দরবনে ১৯ জন দলনেতাসহ ৮০ জন জলদস্যু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে এনকাউন্টার, ক্রসফায়ার, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন কারনে নিহত হয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চাপের মুখে ১২টি জলদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। যার মধ্যে কয়েকটি দুর্ধর্ষ বাহিনীও রয়েছে। এছাড়া কুখ্যাত অন্ততঃ ১৫ জন দস্যু নেতা নিহত হওয়ার পর সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে ডাকাতদের মধ্যে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য আত্মসমর্পণ আগ্রহের সৃষ্টি হয়।