উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদীস আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খোতানী রহঃ

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদীস আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খোতানী রহঃ- উসতাজুল আসাতিজা শাইখুল হাদীস আল্লামা নিয়াজ মাখদূম খোতানী রহঃ ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের কোন এক তারিখে মধ্য এশিয়ার রাশিয়া ও চীনের সীমান্তবর্তী অন্চল খোতান এর সীংগাঙ নামক স্থানে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।
নাম ও বংশ পরিচয়ঃ..
শায়খুল হাদিস আল্লামা নিয়াজ মাখদূম খোতানি (র.) চীনের পশ্চিম সীমান্তে সিং কিয়াং প্রদেশের খোতান অঞ্চলে প্রসিদ্ধ শায়খ পরিবারে ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শায়খ মুহাম্মদ সিদ্দিক ও পিতামহ শায়খ মুহাম্মদ (র.) ছিলেন সে অঞ্চলের ধর্মীয় নেতা।
বাল্যকাল ও প্রাথমিক শিক্ষাঃ
আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খোতানী রহঃ এর বাল্যকাল ছিল অত্যন্ত দুঃখের। তার পাঁচ বছর বয়সে পিতা ইন্তেকাল করেন এবং এক বছর পর মা-ও ইহধাম ত্যাগ করেন। তখন বালক খোতানি (র.) তার চাচা শায়খ মুহাম্মদ কাসেমের কাছে বড় হন।তারপর তার চাচা তাকে স্থানীয় খালাক মাদরাসায় ভর্তি করে দেন।নিয়াজ মিখদূম খোতানী রহঃ উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার লক্ষে তার বাড়ি থেকে তের মাইল দূরে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঐতিহাসিক কাশঘরে গমন করেন।এখানে এক টানা সাত বছর অধ্যায়ন করে গ্ঙান -বিঙ্গানের প্রায় সব বিষয়ের পান্ডিত্ব অর্জন করেন
দাম্পত্যজীবন
কাশ ঘরের শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর আপন মামা শায়খ আহম্মদ খতীবের কন্যার সাথে বিয়ে হয়।বিয়ের পর পরই তিনি ইসলাম ও মাতৃভূমি রক্ষার্থে কমিউনিষ্ট হায়েনা বিরোধী আন্দোলনে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।সামন্য বাহিনী কমিউনিষ্ট হায়েনার সাথে টিকতে না পারায় আল্লামা নিয়াজ মাখদূম খোতানী রহঃ অলৌকিক ভাবে রক্ষা পেয়ে ভারতের সাহারান পুরে আসেন।
আল্লামা খোতানি (র.) নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মুহাজির হিসেবে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫৫ হিজরির ৮ শাওয়াল উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র ভারতের সাহরানপুরে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তার প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে প্রতিটি জামাতে প্রথম স্থান অধিকার করে একজন মুমতাজ ছাত্র হিসেবে তিনি সুপরিচিত হন। দারে জাদিদ নামক ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। দেওবন্দের তখন মুহতামিম ছিলেন হজরত মাওলানা কারি তৈয়্যেব (র.)।
তখন শায়খুল হাদিস ছিলেন মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি (র.)।
জ্ঞানের সাগর নিয়ায মাখদূম খোতানি (র.) ছিলেন তাফসির, হাদিস, ফিকহ, কালাম, সিরাত, আদব, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতি শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। ইলমে তাসাউফের উচ্চ পর্যায়ের একজন সাধকও ছিলেন।
আল্লামা খোতানি রহঃ এর সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্ক ছিল গভীর। তিনি দেওবন্দে ১১ বছর অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস এবং দাওরায়ে তাফসিরের সনদ অর্জন করেন। তিনি বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়ন ছাড়াও বিশেষ গবেষণামূলক অতিরিক্ত কোর্স সম্পন্ন করেন। তার মধ্যে ফিকহ, কালাম, আদব, জ্যোতির্বিদ্যা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনি বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তারপর বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসার জন্য ছারছীনা দরবার শরিফের মরহুম পীর শাহ সুফি আল্লামা নেছারুদ্দীন আহমদ (র.) দারুল উলুম থেকে তাকে আনার জন্য পত্র লিখেন।আল্লামা নেছারুদ্দীন রহঃ এর পত্র পেয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের সব শিক্ষকের পরামর্শে ইলমে হাদিসের খেদমতের মহান উদ্দেশ্যে খোতানের সেনাপতি দারুল উলুমের জ্ঞানের সম্পদ নিয়ে বাংলার নিভৃত পল্লী ছারছীনায় ১৯৪৫ সালে প্রধান মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট ৪৪ বছর তিনি একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আল্লামা খোতানি হুজুর (র.) ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ অলি। দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানির (র.) হাতে বাইয়াত হন।পরে আল্লামা নেছারউদ্দীন (রহঃ) হাতে তাজদিদী বাইয়াত হয়ে বেলায়েতের উচ্চ দরজা লাভ করেন। শরিয়তের আহকামের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী।
উল্লেখযোগ্য ছাত্র মাওলানা আ.ম.ম. আহাম্মদ উল্লাহ,মাওলানা রেজওয়ানুল করিম,মাওলানা আব্দুর রব খান রহঃ। মাওলানা আমজাদ হোসাইন রহঃ আল্লামা মোস্তফা হামিদী রহঃড. সৈয়দ শরাফত আলী, মাওলানা আব্দুর রশিদ খান রহঃ,, মাওলানা ড.কাফিল উদ্দিন সরকার,মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ প্রমুখ।
মৃত্যুঃ দীর্ঘদিন ইলমে হাদিসের খিদমত শেষে অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত রেখে ১৯৮৬ সালের ২৯ অক্টোবর বুধবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ঢাকার আজিমপুর নতুন গোরস্থানে তাকে দাফন দেয়া হয়।
প্রচারেঃ- ছারছীনা মিডিয়া কর্মী ফোরাম