ভারসাম্য নেই উন্নয়নে, মানছে চিনের দলিল

0
(0)

ছাত্র ও যুবদের প্রতিনিধিদলের হয়ে ৬ বছর আগে চিনে গিয়েছিলেন এ রাজ্যের এক নেতা। এই ২০১৭ সালে সে দেশেরই চাংসায় গিয়ে তিনি তাজ্জব! চাংসা হল দক্ষিণ চিনের সেই ইউনানের রাজধানী শহর, যে প্রদেশে জন্মেছিলেন মাও জে দং। দশাসই সব বাড়ি, বিএমডব্লিউ বা অডি ছাড়া ট্যাক্সি প্রায় নেই— এখনকার ছবির সঙ্গে ৬ বছর আগের স্মৃতি কিচ্ছু মেলাতে পারেননি ওই তরুণ নেতা!
মেলাতে আসলে পারেনি চিনও। বহিরঙ্গে যা তাক লাগিয়ে দেওয়া উন্নয়ন, তারই খাঁজে খাঁজে যে মিশে রয়েছে উদ্বেগের অন্ধকার, তা এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে মেনে নিয়েছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। এক দিকে সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং অন্য দিকে ভারসাম্যহীন উন্নয়ন— এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব চিনের সমাজকে বিরাট টানাপড়েনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে স্বীকার করে নিচ্ছে তারা। এই টানাপড়েন কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যেই জোর দেওয়া হয়েছে সিপিসি-র সদ্যসমাপ্ত ১৯তম পার্টি কংগ্রেসে।
বহুদলীয় গণতন্ত্র চিনে নেই। কাজেই বিরোধীদের চাপে সুর নরমের প্রশ্নও নেই। সাধারণ সম্পাদক শি চিনপিঙের নাম ও তত্ত্ব দলের গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে আত্মোপলব্ধিই ঘটিয়েছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যযুক্ত চিনা সমাজতন্ত্রের প্রবল প্রবক্তা শি। তাঁর ওই ভাবধারা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সিপিসি-র গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে প্রস্তাব পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত হয়েছে, সেখানেই স্পষ্ট বিশ্লেষণ রয়েছে উন্নয়নের একপেশে গতির। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আরও উন্নত জীবনযাত্রার জন্য মানুষের প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা চাহিদা এবং ভারসাম্যহীন ও অপ্রতুল উন্নয়ন চিনা সমাজের কাছে এখন মূল দ্বন্দ্ব বা সমস্যা। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মানুষের মনোভাব পড়ে নিয়ে দল ও দেশকে ‘সময়ের আগে’ রাখতেই গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হচ্ছে বলে সিপিসি-র ব্যাখ্যা।
উন্নয়নের গতি গোটা দুনিয়াকে চমকে দিলেও তার সুফল সর্বত্র না পৌঁছনোর কথা এখন প্রকাশ্যেও অস্বীকার করছেন না চিনা কর্তৃপক্ষ। কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল মা চানউ-ও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘আগের চেয়ে চিন অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, প্রত্যেকটা গ্রামে একই রকম সুযোগ-সুবিধা এখনও পৌঁছয়নি। সম্পূর্ণ উন্নত ও আধুনিক চিন গড়ে তোলার নতুন রোডম্যাপ হাতে নেওয়া হয়েছে এ বার।’’
পার্টি কংগ্রেসে শি-র বেঁধে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী, আগামী তিন বছর দলের সব নেতা-কর্মীকে প্রবল পরিশ্রম করতে হবে ‘মোটামুটি সমৃদ্ধ’ চিন গড়ে তোলার জন্য। তার পরে ২০২০ থেকে নতুন যুদ্ধ শুরু হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ উন্নত দেশ তৈরি করে ফেলার। এই যাত্রাপথে দু’টি মূল বিষয়ের দিকে সতর্ক নজর রাখার কথা বলেছে শি-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রথমত, দুর্নীতির সঙ্গে আপস চলবে না এবং পরিবেশ রক্ষায় জোর দিতে হবে। কড়া অনুশাসনে বেঁধে রাখতে সিপিসি-র দাওয়াই— সরকারি টাকায় কোনও আধিকারিক কোনও রকমের মোচ্ছবে জড়াবেন না, সংবাদমাধ্যমে নিজেদের কৃতিত্ব ফলাও করে বর্ণনা দেওয়াও চলবে না! আর পরিবেশ নিয়ে চানউয়ের মন্তব্য, ‘‘বেজিং-সহ চিনা শহরে কুয়াশা মোড়া যে আস্তরণের কথা বলা হয়, সেই ছবি সরাতেই হবে!’’

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.