কমলগঞ্জে হাওর ও নদী রক্ষা কমিটির সংবাদ সম্মেলন

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
মনু, ধলাই নদীর ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত, লাঘাটা নদী খনন ও সংস্কার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটি। মনু, ধলাই নদীর বাঁধ ভাঙ্গা, লাঘাটা নদী ভরাট ও ঝোপজঙ্গলে ভরপুর হওয়ায় দফায় দফায় বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ব্যাংক ও এনজিও ঋণের ভারে জর্জরিত হচ্ছেন। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা সীমান্তে নি¤œাঞ্চল এলাকার কৃষকরা বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানসহ চার দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের শমশেরনগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার, শমশেরনগর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়ন, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ও কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের কৃষক সাধারন প্রতি বছর অকাল বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। নি¤œাঞ্চল এলাকা থাকায় ঐ এলাকার কৃষকরা সাধারণত: বোরো চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অতীব দু:খের বিষয়, চলতি বছরে অতিবৃষ্টি জনিত কারনে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের একাধিক স্থানে নদীভাঙ্গন দেখা দেয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদী ভাঙ্গনের ফলে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়।
বন্যার পানিতে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের শত শত হেক্টর বোরো ক্ষেত সম্পুর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছে। ধলাই নদীর পানি নিস্কাশনের একমাত্র লাঘাটা নদী দিয়ে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন হয়ে মনু নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। লাঘাটা নদী ভরাট, গাছগাছালি, বাঁশঝাড় ও নদীতে মাছ নিধনের জন্য বাঁশের খর্ঁাটি স্থাপন করায় পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে বন্যা ও ঢলের জলাবদ্ধতার কারনে ঐ এলাকার কৃষকগনের আউশ, আমন, বোরো ফসল ছাড়াও সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। যার কারনে এলাকার দরিদ্র কৃষকগন ঋনগ্রস্ত হয়ে অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন। নি¤œবিত্ত পরিবার সমুহ একবেলা, আধাবেলা খেয়ে, না খেয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি অসময়ে বৃষ্টিপাতে ধলাই ও মনু নদীর ভাঙ্গন দিয়ে পানি বেরিয়ে অকাল বন্যার ফলে সর্বশেষ আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এলাকার দরিদ্র কৃষক সাধারণ বোরো ও আমন মৌসুমে বিভিন্ন সময়ে কৃষি ঋন ও এনজিও’র ঋনের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত, লাঘাটা নদী খনন ও নদীর শমশেরনগর ইউনিয়নের সীমানা হতে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মনুনদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ঝোপজঙ্গল, বাঁশঝাঁড়, মাছ নিধনের জন্য মাছ ধরার বাঁশের খাঁটি অপসারন করে দ্রুত পানি নিস্কাশনের দ্রুত ব্যবস্থা, বন্যা দুর্গত এলাকায় কৃষি ঋণ আদায় স্থগিত করে সুদ মওকুফ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরন প্রদান, পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষি ঋণ বিতরণ এবং আগামী বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত সকল কৃষকদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনামূল্যে সার, বীজ বিতরণ সহ চারদফা দাবি তোলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. দুরুদ আলী। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান চিনু, সদস্য সচিব তোয়াবুর রহমান তবারক, আনোয়ার খাঁন, সিদ্দিকুর রহমান, শাহীন উদ্দীন, ক্বারী ফজলু মিয়া প্রমুখ। এসব দাবি বাস্তদায়নে আগামী ৩ নভেম্বর গণসংযোগ ও ৬ নভেম্বর সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।