হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব ৬ষ্ঠ পর্ব

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ)) = পূর্ব প্রকাশের পর t হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পান্ডিত্বে. আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের আবির্ভাব ঘটে। নিঃসন্দেহে মরহুম মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষের এত বহুমুখী প্রতিভার সমনয় ঘটতে আমরা সচরাচর দেখি না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ বা ইনসানে কামিল।মানুষ চলে যায়, থেকে যায় তার কর্ম ও স্মৃতি। কর্মই মানুষকে পৃথিবীর বুকে অমর করে রাখে। এ জন্যই বলা হয় ‘যার কর্ম ভাল তাঁর সকল ভাল’। মানুষ তার ভাল কর্মের দ্বারাই ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এ কর্মের কারণের যুগযুগ ধরে মানুষ তাকেঁ স্মরণ করতে থাকে। চর্চ্চা করতে থাকে তাঁর কর্ম জীবন। জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে এদেঁর প্রতিটি কাজ ও কর্মকে এদেঁর মধ্যেই অন্যতম এক মহা মনীষী হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.। হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. এর কর্ম জীবন মানুষের জন্য এক অনন্য পাথেয়। তাঁর কর্ম জীবন ছিল এক বিশ্ময়কর কর্ম জীবন। যা ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি একদিকে ছিলেন একজন পীর, সূফী ও সাধক, অন্যদিকে ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সমাজ সেবক, সাংবাদিক, যুবসংগঠক, চিকিৎসক, গরীব ও মজলুম মানুষের বন্ধু ও সঠিক দিকের দিশারী একজন সিপাহসালার। হুজুর তাঁর কর্ম দ্বারাই উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছিলেন। একজন মানুষ তাঁর জীবনে এতগুলো কাজ করতে পারেন যা চিন্তাও করা যায়না। এ জন্যই হুজুর কেবলার কর্ম জীবন বিস্ময়কর ও ব্যতিক্রমধর্মী। খনজন্মা এই মহা মনীষীর কর্ম জীবন ছিল বিশাল ও বি¯তৃত। তাঁর কর্ম জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি কর্ম জীবনের শুর”তেই শিক্ষকতা করেছেন, পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামী ও সামাজিক সংগঠন সংস্থা কায়েম করে এর মাধ্যমে ইসলাহে নফছ (আত্মশুদ্ধি) ইসলাহে কওম (সমাজ শুদ্ধি) ও ইসলাহে হুকুমত (রাট্র শুদ্ধি) এর ব্যাপারে নিয়ম তান্ত্রিক আর্ন্দোলন করেছেন, ইসলামের বিভিন্ন বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করে দর্শন পেশ করেছেন, বহু কিতাব প্রনয়ন করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, বহু দ্বীনী প্রতিষ্ঠান কায়েম করেছেন, বায়োকেমিক ও ভেষজ চিকিৎসার উপর গবেষণা করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবাও করেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে দেশের মানুষকে, পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দকে এবং দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নে সকল দেশ প্রেমীক ভাইদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যুগন্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। হুজুর কেবলার কর্ম জীবনের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরই ¯েœহভাজন ছাত্র ও মানস পুত্র মাওলানা কবি র”হুল আমীন খান ‘‘কায়েদ ছাহেব হুজুরকে যেমন দেখেছি’’ প্রবন্ধের এক জায়গা লিখেছেন- ‘‘কায়েদ ছাহেব হুজুরকে আমি দেখেছি উস্তাদের আসনে বসে অধ্যাপনা করতে, দেখেছি প্রশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠান চালাতে; সংগঠক হিসেব সংগঠন গড়ে তুলতে, পরিচালনা করতে ও সময়োপগোগী কর্মসূচী দিতে; চিন্তাবিদ হিসেবে জটিল, কঠিন সমস্যায় সঠিক সমাধান দিতে; লেখক হিসেবে গ্রন্থরাজি রচনা করতে; সম্পাদক হিসেবে নিপুন হাতে সম্পাদনার কাজ চালাতে; মুরিদ হিসেবে আদাবুশ শায়খের গভীর মনোযোগ দিতে; ধ্যানী হিসেবে মুরাকাবা মুশাহাদা করতে; পীর হিসেবে তরিকতের সবক দিতে; চিকিৎসক হিসেবে ব্যবস্থাপত্র দিতে; ঝাড়-ফুঁক দিতে; পরামর্শ দাতা হিসেবে সঠিক পরামর্শ দিতে; সংগ্রামী মুজাহিদ হিসেবে অনৈসলামী কার্যকলাপের বির”দ্ধে, দুর্নীতি-দুস্কৃতির বির”দ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে; মিছিলের শুর”ভাগে থেকে মিছিল পরিচালনা করতে; দেখেছি উদার কন্ঠে ইসলামী সংগীত গাইতে, নাট্য পরিচালনা করতে; দেখেছি চিন্তাবিদ, দার্শনিক হিসেবে বিষয়ের গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে; দরদী মানুষ হিসেবে পরিচিতজনদেন খোঁজখবর নিতে; দেখেছি দুস্থ, দুর্গত, অভাবগ্রস্ত লোকদের সমসাথী হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সচেষ্ট হতে। রোগীদের সেবা করতে, অনাথ ইয়াতীমদের আশ্রয় দিতে, তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে এবং এসবের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠত তাঁর অপূর্ব নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দ্বীনের দরদ ও মানব প্রেম’’। তথ্য সূত্র নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট ঝালকাঠি। চলবে