এ যুগের ঘেটু পুত্র গৌরনদীর কমলা রানী

মো.আহছান উল্লাহ,গৌরনদী।
জমিদার যুগে বিশেষ নৃত্য-গানের প্রচলন ছিল। সেখানে কোন মেয়ে নাচ গান করতো না। ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে জমিদারের সামনে নাচানো হতো। মেয়ের সাজে ওইসব কিশোরদের ঘেটু পুত্র বলা হয়।
বরেন্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর “ঘেটুপুত্র কমলা” ছবিতে অনেকেই ঘেটু পুত্র কমলাকে দেখেছি। তবে এ যুগের ঘেটু পুত্র কমলা রানীর কাহিনী একটু আলাদা। রোমাঞ্চকর ঘটনার পিছনে আছে অনেক দুঃখগাথা।
বাংলার লোকজ সাস্কৃতির বিলুপ্ত প্রায় গাজী কালু চাম্পাবতী মঞ্চ নাটকে, কাজ করার মধ্য দিয়ে ২৫ বছর বয়সি যুবক এখন ঘেটুপুত্র কমলা রানী। পরিবারে সবার সুখের জন্য তাকে ছেলে থেকে মেয়ে সেজে মানুষকে দিতে হয় বিনোদন। এ আয় দিয়ে চলে বাবা,মার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ। এটাই তার রোজগারের একমাত্র পথ। বিবাহ,জন্মদিন কিংবা কোন মঞ্চ নাটক হলেই ডাক পরে এ যুগের ঘেটু পুত্র কমলা রানীর।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর, সাদেক হাওলাদারের পুত্র মো.সাইফুল ইসলাম শিপন, সেই ঘেটু পুত্র কমলা রানী। চার ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। অসুস্থ্য বাবা,মা ও এক বোন নিয়ে চার সদস্যর সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শিপন ।
ঘেটু পুত্র কমলা রানী জানান, আমি যখন ৫ম শ্রেনীতে পরি তখন বাবা,মা অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এ অসুস্থ্যতার মধ্যে এক বোনকে বিবাহ দিতে হয়। দুই ভাই আলাদা সংসার গরেছেন। অসুস্থ্য বাবা,মা ও বোনকে নিয়ে আমার সংসার। সংসারের দায়ীত্ব কাঁদে চাঁপায় ৫ম শ্রেনীর পর আর পড়ালেখার ভাগ্য হয়নি।
প্রথম দিকে বিড়ি কারখানায় কাজ করতাম। ওই সময় সম-বয়সিদের সাথে প্রায়ই গাজী কালু চম্পাবতী নাটক দেখতে যেতাম। সে সময় আমাদের গা গ্রামে সুখনো মৌসুমে প্রায় বাড়িতেই রাতে গাজী কালু চম্পাবতী নাটক হতো। নারী,পুরুষ,ছেলে,বুরো সবাই সে অনুষ্ঠান দেখত। সেই থেকেই আস্তে আস্তে এ পেশায় চলে আসি। এটা এখন বলতে পারেন আমার পেশা। পেটের দায়ে করতে হচ্ছে। ঝাঁজালো মেকাপের কঠিনতার মাঝেই চলছে আমার পরিবারের জীবন-জীবিকা। ১৫ বছর নিজের শত দুঃখগাথা অন্তরে চাপা রেখেই মানুষকে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছি। প্রতি অনুষ্ঠানে ৬শ থেকে এক হাজার টাকা পাই। করোনার কারনে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে এখন আর কোন মঞ্চর অনুষ্ঠানে যাবো না। কারন মঞ্চ অনুষ্ঠানে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। জানি না এ ভাবে আর কতদিন চলবে।
স্থানীয় যাত্রা শিল্পি মো.বশির ইসলাম জানান, ছেলে হলেও এখন ও কমলা রানী নামেই বেশী পরিচিত। করোনার আগে ঝালকাঠীর নবগ্রামে এক অনুষ্ঠানে মেয়ে সেজে ওর নাচ দেখে একজনত বিয়েরই প্রস্তাব দিল। সে বিশ্বাসই করছিলনা শিপন মেয়ে না, ছেলে।
ব্রিটিস আমলে ঘেটু গান নামে নতুন গ্রামীন সঙ্গীতধারা চালু হয়। সে সময় কিছু সুদর্শন কিশোরদের মেয়ে সাজিয়ে নাচ গান করানোর প্রচলন ছিল। ওই সব কিশোরদের আঞ্চলীক ভাষায় ঘেটুপুত্র বলা হতো।