বিশ্বের বর্তমান সিস্টেমে মুসলমানরা সবচেয়ে অনিরাপদ

0
(0)

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ)) = মিয়ানমার ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ইস্যু। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বাংলাদেশীদের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট।

মিয়ানমার ইস্যুটি থেকে বাংলাদেশীদের জন্য কয়েকটি শিক্ষনীয় বিষয় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলোর মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হলো-

রোহিঙ্গা মুসলমান গণহত্যা চলার সময় মুসলমানরা একটি সমাধানকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। তারা এই ইস্যুতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। জাতিসংঘের ভরসায় কোন মুসলমান দেশই প্রথমদিকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। বরং ভারতসহ জাতিসংঘের সদস্য অনেক রাষ্ট্রই রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যাকে সমর্থন করেছে।

জাতিসংঘের হাতে ক্ষমতা ছিলো এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার। উল্লেখ্য, ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ প্রদত্ত ইজরায়েল-ফিলিস্তিন পার্টিশন প্ল্যানই ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রথম স্বীকৃতি। সংক্ষেপে ঘটনাটি বলে দেই- জাতিসংঘ প্রথমে একটি মানচিত্র তৈরী করে যাতে ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জাতিসংঘের আস্কারা পেয়ে ইজরায়েল সেই মানচিত্রে চিহ্নিত অংশের চেয়েও অনেক বেশী ভূমি দখল করে ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তখন জাতিসংঘ কিছুটা কপট নিন্দা জানালেও ঠিক তার পরের বছর ১৯৪৯ সালে ইজরায়েলকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেয়।

সর্বপ্রথম তুরস্ক রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তুরস্কের একক প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলমান গণহত্যা ইস্যুটি স্থান পায়। একইসাথে মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া সহ কতিপয় মুসলিম দেশও এই ইস্যুতে সোচ্চার হয়।

উল্লেখ্য, মালদ্বীপ এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় গণপ্রতিবাদ হয় এবং কুটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু সৌদী আরব জোটভুক্ত তথা আরব লীগের দেশগুলো থেকে কোন প্রতিবাদ হয়নি। বিষয়টি এতটাই দৃষ্টিকটু যে, দিল্লী জামে মসজিদের ইমাম এই বিষয়ে সৌদী বাদশাহকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছে। (সুত্র: https://goo.gl/kw8p5U)

কথিত মানবাধিকার সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, ওআইসি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি সংস্থাগুলো নীরবে শুধু দেখে গিয়েছে যে কত পাশবিক উপায়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা করা হয়েছে; কিন্তু কোন সংস্থাই এই গণহত্যা বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

ওআইসি ব্যস্ত ছিলো তার প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্মেলন নিয়ে। সেখানে যদিও তুরস্ক রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে আলোচনা করেছে, কিন্তু ওআইসি-এর পক্ষ থেকে শুধু মাথা ঝাঁকানো ছাড়া অন্য কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সেই ক্ষোভ থেকে পাকিস্তানের একজন টিভি উপস্থাপক ও জিও টিভির নির্বাহী সম্পাদক হামিদ মীর বলেছেন, “বড়ই আফসোস! মুসলিমবিশ্বের সংগঠনগুলো ও ওআইসি মুসলিমদের শত্রুদের চেয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশি কথা বলে।” (সুত্র:https://goo.gl/8FV1PL)

”বিপদে বন্ধুর পরিচয়“ প্রবাদটি আমরা জানি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ইস্যুতে অনেকের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরুপ জাতিসংঘ, ওআইসি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আরব লীগ ইত্যাদি কথিত অভিভাবক সংস্থা সমূহ, যাদেরকে বিশ্বের কর্ণধার হিসেবে ধরা হয়, তারা কোনভাবেই মুসলমানদের বন্ধু নয়।

২০১৫-তে ইয়েমেনে গণহত্যা চালানোর সময় জাতিসংঘ, ওআইসি সহ কথিত সংস্থাগুলো অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে সৌদির পক্ষ নিয়ে ছিলো। তারা সৌদী বাহিনী কর্তৃক ইয়েমেনী মুসলমানদের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু ইয়েমেনে কিছু ডাক্তার পাঠিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছে।

সিরিয়ায় এখনও যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। এই যুদ্ধে আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক সবাই যোগ দিয়েছে। জাতিসংঘ শুধু নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে আসছে।

এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের অভিভাবক কে? আজকে ভারত যদি সংখ্যালঘু নির্যাতনের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের উপর সামরিক আগ্রাসন চালায়, তবে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ভারতকে বাহবা দিবে। আমেরিকা, সৌদী আরব ইত্যাদি দেশগুলো বাংলাদেশের দোষ খুঁজে বের করবে যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী দল আইএস-কে সহযোগিতা দিয়ে আসছে ঠিক যেরুপ আচরন তারা বর্তমানে পাকিস্তানের সাথে করছে। সবশেষে জাতিসংঘ এই সামরিক হামলাকে স্বীকৃতি দেবে; সাথে সাথে বিভিন্ন আমেরিকান ব্লকের দেশ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সামরিক সহযোগিতা দেবে ঠিক যেমনটি সিরিয়ার ক্ষেত্রে ঘটছে।

এহেন পরিস্থিতিতে কার কাছে বিচার নিয়ে যাবে বাংলাদেশ? কার থেকে সহযোগিতা আশা করবে? ওআইসি, জাতিসংঘ নাকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল?

বর্তমানে বাংলাদেশের চতুর্দিকে কালসাপের মতো ফণা তুলে বসে আছে ভারত, মিয়ানমার, ভুটান, নেপাল, খানিকটা দুরে চীন যাদের একটিও মুসলিম দেশ নয়। বাংলাদেশের জন্য এখন একটি কাজ করা অত্যন্ত জরুরী। যে সমস্ত দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথমে এগিয়ে এসেছে, আন্তরিক তথা বাস্তবমুখী কার্যক্রম নিয়েছে সর্বোপরি ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা করেছে, তাদেরকে নিয়ে একটি মুসলিম জোট তৈরী করতে হবে। যেমন, ইরান, তুরস্ক, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া ইত্যাদি দেশ যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে এগিয়ে এসেছে। তখন বাংলাদেশ অন্তত এতটুকু স্বস্তি লাভ করবে যে বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে বিনা প্রতিবাদে, মিডিয়ার অন্তরালে গণহত্যার স্বীকার হতে হবে না। উপরন্তু এর মাধ্যমে আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত ও চীনের সামরিক, কুটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে বাংলাদেশ কিছুটা নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করতে পারবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.