সবুজ বাংলা ডেস্কঃ বিশ্ব জুড়ে দূষণের শিকার প্রতিটা মানুষ। এ কথা আজ আর তর্কসাপেক্ষ নয়, এ কথা আজ তরম বাস্তব। কোনও না কোনও ভাবে দূষণে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা সকলেই। কিন্তু যে মানুষ এখনও ভূমিষ্ঠই হয়নি, পৃথিবীর আলো-হাওয়া যাকে স্পর্শই করেনি, সে-ও দূষণের গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত ভাবা যায়! সম্প্রতি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এমনই তথ্য। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা এত বেশি মাত্রায় দূষণের শিকার হচ্ছে, যে তাঁধের গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরেও বইছে কার্বন কণা! সমীক্ষায় এমনই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই জার্নালের প্রতিবেদনে।
জীবনবিজ্ঞান বলছে, প্লাসেন্টা বা নাড়ির মাধ্যমে, মায়ের শরীর থেকে খাদ্য সরবরাহ হয় ভ্রূণে। অর্থাৎ মা যে খাবার খাচ্ছেন, তা থেকেই পুষ্টি সংগ্রহ করে আগামীর জীবন। গর্ভের সন্তানকে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ এবং শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই প্লাসেন্টা।
এই কারণেই অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অ্যালকোহল, নিকোটিন বা অন্য কোনও মাদক নিতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা, কেউ ধূমপান করলে, তা থেকেও দূরে থাকতে বলেন। কারণ মায়ের শরীরে কার্বন প্রবেশ করলে প্লাসেন্টার মাধ্যমে তা গর্ভাশয় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ক্ষতি হয় ভ্রূণের। ঠিক এই ভাবেই, মায়ের প্রশ্বাসের সঙ্গে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণাও পৌঁছে যাচ্ছে ভ্রূণ পর্যন্ত।
আর গবেষণা বলছে, এই ক্ষতি বিশ্ব জুড়ে এতই বেশি পরিমাণে বাড়ছে, যে বায়ুদূষণের কারণে গর্ভপাত, সময়ের আগেই শিশুর জন্মগ্রহণ এবং জন্মের সময়ে শিশুর কম ওজনে থাকার ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ভ্রূণের উপরে যে কোনও রকমের ক্ষতির প্রভাব জন্মের পরে তার জীবনভর থেকে যায়। তাই গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি এড়াতে চাইলে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের দূষণমুক্ত জায়গায় থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বেলজিয়ামের হ্যাসেলত ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, ডক্টর টিম নহরত এই গবেষণার এক জন অন্যতম সদস্য। তিনি বলেন, “ভ্রূণ অবস্থাটি হল যে কোনও মানুষের জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তখন তৈরি ও পরিণত হতে থাকে। ভবিষ্যতের সুরক্ষা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই সময়ে কোনও রকম বাধা তৈরি হলে। সে জন্যই অন্তঃসত্ত্বাদের দূষণ এড়িয়ে চলতে হবে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থেই।”
ওই জার্নালটি জানাচ্ছে, বেলজিয়ামের হ্যাসেলত ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা শহরের ২০ জনের বেশি নারীর ভ্রূণের উপর পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন। হ্যাসেলত শহর যে অতিরিক্ত বেশি মাত্রায় দূষিত, তা বলা যায় না। তার পরেও তাঁরা প্রতিটি মায়ের প্লাসেন্টাতেই অতিক্ষুদ্র কার্বন কণার অস্তিত্ব পেয়েছেন। এবং মিলিয়ে দেখেছেন ভ্রূণের শরীরে ক্ষুদ্র কার্বন কণার যে সংখ্যা, তার সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা মা যতটা দূষণে ছিলেন, তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
তাঁদের দাবি, যে সব মায়েরা গাড়ি-ঘোড়া ভর্তি বড় রাস্তার ধারে থাকেন, তাঁদের গর্ভস্থ ভ্রূণে প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ২০ হাজার কার্বন কণা মিলেছে। তুলনায় যাঁরা একটু ফাঁকা এলাকা থেকেছেন তাঁদের ভ্রূণে প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ১০ হাজার কার্বন কণা মিলেছে।
এই পরিসংখ্যান মোটেও স্বস্তির নয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। যে ভাবে দূষণ বাড়ছে, তাতে কোনও মা-ই আর নিরাপদ নন। এবং একটি শিশুকে সারা জীবনের জন্য সমস্যায় ফেলে দেওয়াও কোনও কাজের কথা নয়। সেই কারণেই মায়েদের যতটা সম্ভব সাবধানতা বাড়াতে বলছেন তাঁরা। অনাগত সন্তানের স্বার্থেই দূষণ থেকে দূরে থাকা জরুরি তাঁদের। দ্য ওয়াল