মুছে গেছে ওমরের মিষ্টি হাসি

১১ মাসের ছোট্ট ওমর। কালো চোখ, বাদামি চুল আর গোলগাল মিষ্টি চেহারা। গায়ে মোটা সুতি কাপড়ের জামা। শিশুদের বহন করার পুশচেয়ারে শুয়ে হাসছে সে।
বাবার মোবাইল ফোনসেটে তোলা ছবিতে ওমরের সেই ভুবনভোলানো হাসি এখন কেবলই বুকচাপা বেদনার স্মৃতি। গত বুধবার গাজায় আঘাত হানা ইসরায়েলি বোমা চিরতরে মুছে দিয়েছে ওর সেই প্রাণজুড়ানো হাসি, কেড়ে নিয়েছে ওই কচিপ্রাণ। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় গাজার এই চিত্র তুলে ধরা হয়।
ওমরের বাবা জিহাদ মাশরাউই গাজায় বিবিসির আরবি কেন্দ্রের প্রতিনিধি। কঠোর পরিশ্রমী ও নরম স্বভাবের জিহাদ গত বুধবারও গাজা ব্যুরোতে ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলেন। ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান আহমেদ আল-জাবারি নিহত হয়েছেন। সেই খবর সম্পাদনা করতে করতে হঠাত্ চিত্কার করে বের হয়ে আসেন জিহাদ। মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুতগতিতে তিনি নামছিলেন। মানসিক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ছিল তাঁর মুখটি।
কেননা ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় তাঁর বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। মারা গেছে তাঁর ওমর।
শুধু ওমর নয়, জিহাদ হারিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হেবাকে। বোমা হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে হেবার শরীর। মৃত্যুর পর তাঁর মাথা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জিহাদের চার বছর বয়সী আরেক ছেলে আলী হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। বারবার সে বাবার কাছে ওমরের কথা জানতে চাইছে।
ওমরের ছবি দেখিয়ে বাবা জিহাদ বলছিলেন, ‘সবে বোল ফুটেছিল ওর মুখে। আধো আধো বোল—বাবা আর মা। আর সারাক্ষণ ওমর শুধু হাসত।’
জিহাদের ১১ সদস্যের পরিবারটি গাজা সিটির সাবরা এলাকায় ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকত। সেখানে পাঁচজনকে থাকতে হতো একটি কক্ষে। আজ সেই বাড়ির বিছানাগুলো কাঠকয়লায় পরিণত হয়েছে। আলমারিতে স্তূপ হয়ে আছে শিশুদের পুড়ে যাওয়া জামাকাপড়।
দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত ব্যক্তিদের চিকিত্সায় ব্যস্ত মাজিদি। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বাড়ির কথা ভুলে গিয়েছেন তিনি। কয়েক দিন ধরে আদরের ছেলেটাকেও একবার দেখতে যাওয়ার সময় পাচ্ছিলেন না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক ঘণ্টা আগেও হাসপাতালে ব্যস্ত মাজিদির কাছে খবর এল একটি শিশু গুরুতর আহত। ছুটে গেলেন মাজিদি। গিয়ে দেখেন, এ যে আবদুল রহমান নাইম—তাঁরই ছেলে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
জাতিসংঘের এক প্রাথমিক হিসাবে ইসরায়েল ও হাসামের মধ্যকার এ যুদ্ধে গাজাতেই ১৫৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১০৩ জন সাধারণ মানুষ। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক ব্যক্তি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০ জন শিশু। এর মধ্যে ১২ জনের বয়স ১০ বছরের নিচে।