স্বরূপকাঠিতে জমজমাট চাঁইয়ের হাট ॥ উৎপাদন খরচ বেশী লাভ কম ব্যবসায়ীদের

0
(0)

স্বরূপকাঠিতে জমজমাট চাঁইয়ের হাট ॥ উৎপাদন খরচ বেশী লাভ কম ব্যবসায়ীদের
হযরত আলী হিরু, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির জগন্নাথকাঠি ও মিয়ারহাট বন্দরে ক্রেতা বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠেছে চাঁইয়ের (বাঁশের তৈরি মাছ ধরার উপকরণ) হাট। সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারে ওই হাট বসে। সরেজমিনে বন্দর দুটি ঘুরে দেখা গেছে খালের পাড়ের বিশাল অংশ জুড়ে বসে ওই হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা চাঁই বিকিকিনির জন্য হাট দুটিতে ভিড় জমাচ্ছেন। বছরে চৈত্র থেকে শ্রাবন এই ৫ মাস নদী ও খাল বিলে মাছ বেশি পাওয়া যায় বলে এই সময়কে চাইয়ের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। হাটে ৪ ধরনের চাই বেচাকেনা হয়। এগুলো হল খলনী, বুচনি, ময়ুরপঙ্খী, গোল চাঁই। এর মধ্যে ময়ুরপঙ্খী ও গোল চাঁইয়ের চাহিদাই বেশি। প্রতিটি খলনী চাঁই বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বুচনি চাঁই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ময়ুরপঙ্খী ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা, গোল চাঁই ৬০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়াও চাঁইয়ের গড়া (বাঁশের তৈরি বেড়া) বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৮০ টাকা।

প্রতি হাটে বন্দর দুটিতে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার চাঁইয়ের বেচাকেনা হয়। জগন্নাথকাঠি বন্দরে পাশ্ববর্তী নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মেদা গ্রামের চাঁই ব্যাবসায়ী চাঁন মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে এ ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত। তাদের এলাকার অন্তত দুই শতাধীক পরিবার এই ব্যাবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। তারা এলাকায় চাঁই তৈরি করার জন্য কারখানা তৈরি করেছেন। সেখানে এলাকার নারী পুরুষেরা সমানতালে চাঁই তৈরি করে। প্রতিটি চাঁই তৈরিতে ৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয় বলে তিনি জানান। ওই এলাকার আর এক ব্যাবসায়ী মো. কাইয়ুম জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর চাঁইয়ের চাহিদা একটু বেশি। কারখানা থেকে হাটে চাঁই আনতে প্রতিটি চাইয়ের জন্য ট্রলারে ২ টাকা করে পরিবহন খরচ এবং হাটে ৩ টাকা করে খাঁজনা দিতে হয় বলে সে জানায়। বলদিয়া ইউনিয়নের কাটাপিটানিয়া এলাকার চাঁইয়ের কারিগর অমূল্য বেপারী জানান, বর্তমানে বাঁশ ও সুতোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় যে হারে চাঁইয়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে সে হারে দাম বাড়েনি ফলে তারা এখন আর এ ব্যাবসায় তেমন একটা লাভ করতে পারছেন না। এছাড়া এ ব্যাবসায়ের জন্য ব্যাংক থেকে ঋন দেয়া হয়না বলে বেসরকারি এনজিও ও স্থানীয় ব্যাক্তিদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋন নিয়ে ব্যাবসা করতে হয় তাদের। সেই ঋন শোধ করে যে সামান্য আয় থাকে তা দিয়ে úরিবার পরিজনদের নিয়ে সংসার চালাতে বড়ই কষ্ট করতে হয় তাদের। বৈঠাকাঠা এলাকার নারী কারিগর মুক্তা বেগম জানান, দিনে ১৫ থেকে ২০ টি ছোট চাঁই তৈরি করতে পারেন প্রতিটির জন্য তিনি ৫ টাকা করে মজুরী পান। চাঁই ক্রেতা ধলহার গ্রামের সন্তোষ মিস্ত্রী জানান, তিনি প্রতিবছরই চাঁই কিনে থাকেন গতবছরের তুলনায় এ বছর চাঁইয়ের দাম একটু বেশি । তার ৩০ টি চাঁইয়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার মাছ পেয়ে থাকেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.