বিশ্বাস বা ইমান //কবি জিয়াউল হক//

জেনে শুনে মনে বিশ্বাস , মুখে স্বীকার এবং কাজে প্রমাণ করাকে বিশ্বাস বা ইমান বলে। এরপর আসে নিয়তের কথা। যেকোনো বিশ্বাসে নিয়ত ছাদেক দেলে করতে হয়। এজন্য দরকার আমরণ সত্ত¡া। এ নিবন্ধে আমরা এমনই এক সৎ চরিত্রবান ও আদর্শিক ব্যক্তিকে উপস্থাপন করব যার জিবনে কোনো কাজে ব্যর্থ হননি। প্রথম শ্রেণি থেকে এম.এ অনার্স পর্যন্ত তিনি সব ক্লাসে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট এবং কর্মজীবনে এসেও তিনি যেকোনো প্রকার ভালো কাজে নেতিবাচক চিন্তা করেননি। প্রামাণিক ভাবে আমরা তাঁর লেখা থেকেই এ স্বাক্ষ্য দিচ্ছি।
পাওয়ার যা
পাওয়ার যা-সবই পেয়েছি
এই একুশ বছরের তরুণ জীবনে;
পিতার ¯েœহ, মায়ের আদর
সমাজে প্রতিষ্ঠা, জনতার সংবর্ধনা,
প্রতিবেশীদের ভালোবাসা
কোন কিছুই বাকি নেই পেতে।
সহপাঠীদের সহৃদয় বন্ধুত্ব,
শিক্ষকের প্রাণখোলা আশীর্বাদ,
ক্লাসের প্রথম ছাত্র, স্কলারশীপের কৃতিত্ব,
স্কুলের সেরা ছাত্র-
খেলার মাঠে দুর্দান্ত খেলোয়াড়
সব কিছুই পেয়েছি আমি।
সাচ্চা তরুণ পৃথিবী জয়ের নেশায়
এড়িয়ে গিয়েছি সহপাঠিনীদের সজল চোখের মায়া;
ত্যাজিয়া আপন প্রেমের ভূবন গড়েছি পাষাণ কায়া।
সত্যব্রত জীবন-
অন্যায়, অবিচার প্রতিরোধে বিজয়ী তরুণ;
গরিব কাঙ্গালের সবচেয়ে আপনজন,
জীবন প্রভাতে কোন কিছুই নেই বাকি।
শৈশবে পিতার উঠতি সংসারে
তিন বদলার খাটুনি,
জীর্ণ বস্ত্র, জুতোহীন পায়ে কলেজ করা
কোন কিছুই নেই যা পাইনি!
দুঃখ কষ্ট, আনন্দ ঐশ্বর্য সুখের
সকল শাখায় করেছি বিহার অহর্নিশ।
পাইনি শুধু একটি চাঁদের রাত,
চুরি করে কোন ষোড়শীর মুখে
একটি চুমোর স্বাদ।
পাইনি একটি ¯িœগ্ধ মুখের হাসি,
বলেনি তো কেউ চোখে চোখ রাখি-
“প্রিয়তম ভালোবাসি”।
দেইনিতো কারও উদ্ধৃত বুকে
আঙ্গুলের জয় টীকা,
জ্বালিনিতো কারও মনের গহীনে
প্রেমের প্রদীপ শিখা।
কবি জিয়াউল হক বিরচিত পাওয়ার যা কবিতার আলোকে দেখা যায়, বাস্তব জীবনের অনুসারী হিসেবে তাঁর কথা ও কাজ এক। সফলতা যেকোনো ব্যক্তির কাজেরই প্রাপ্তি এবং ব্যর্থতাও ভুল কাজের প্রতিফল ভোগ। নিয়ত অনুসারে কাজের ফল। নিয়তের মূলে রয়েছে বিশ্বাস। রসুল সঃ বলেছেন “ইন্নামাল আমানুবিন নিয়তি।” আবার পবিত্র গীতায়ও রয়েছে “যদৃশ ভাবনা যস্য, সিদ্ধি ভবতে তদৃশ” ভাব অনুসারে কাজের ফল। বিশ্বাসেই সফলতার শক্তি। যেকোনো বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা থেকে জানা, জানা থেকে বিশ্বাস। মনে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং সে অনুসারে কাজে প্রমাণ করা। তবে তকদিরে থাকলেই বিশ্বাস হয় এবং তকদির অনুসারে চলে তদবির বা কাজ। তাইতো পবিত্র কুরআনুলকরিমে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “মানজাদ্দা ফাওয়াজাদ্দা।” চেষ্টা করলেই পারে। ইংরেজিতে তাইতো প্রবাদ আছে Where there is a will, there ia a way. ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। শৈশব থেকেই কবি জিয়াউল হকের সফলতার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। উদ্দেশ্যে পৌঁছাবার লক্ষ্যে তার ছিল অশেষ সাহস, অশেষ বৈয্য, ত্রাণান্ত নিষ্ঠা ও মনোবল। তার যে কোন কর্মকে পর্যালোচনা করলে মেলে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সুন্দর, বাচন ভঙ্গি এবং পরিশলীলিত রুচিবোধ। তার ছাত্র জীবনে একুশ বছরে কোনো কাজেই তিনি ব্যর্থ হননি এবং কোনো ক্লাসেই তিনি ২য় হননি। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
কবি জিয়াউল হক, মা বাবার ¯েœহ-আদর, এলাকার বর্ষিয়ানদের আশীর্বাদ , আত্মীয় স্বজনের ¯েœহ ভালোবাসা, সহপাঠিদের দেলী বন্ধুত্ব। শিক্ষক মÐলীর ¯েœহ-আশীর্বাদ সবই পেয়েছেন।
তার যা ছিলনা তার জন্য দুঃখ না করে হাসোজ্জ্বল বদনেই চলাফেরা করেছেন। জুতো ছিড়ে গেছে খালি পায়ে কলেজে গিয়েছেন কিন্তু অন্য জনেরটা এনে ব্যবহার করেননি। এমনকি বাবার সংসারে তিনি নিয়মিত শ্রম খেটেছেন। তার জীবনে ছিলনা কোন প্রকার ফাকিবাজি, প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া।
তিনি অবশ্য শান্তভাবে যে কোনো প্রকার অন্যায় , অপকর্ম, যুলুমের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু কারও কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে বা ভুল স্বীকার করতে হবে কিবা মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে এমন কাজ তার জীবনে নেই।
কিন্তু মানব জীবনের সব শাখায় দিন রাত বিচরণ করলেও তার জীবনে কোনদিন ভুলেও প্রেমের ফাঁদে পা রাখেন নি। সব ক্লাশের ফাষ্ট ছাত্র হিসেবে কিশোরী, তরুণী তার পেছন লেগেছিল; কিন্তু সমাজে মাথা নত করে লোকের হাসির খোড়াক হবার ভয়ে ভুলেও কোন প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বা চিঠির প্রতি জবাব দেননি। ছাত্র জীবনের ব্রত মাথায় নিয়ে তিনি পড়াশুনা করেছেন। কবি তাই গর্বের সাথে ঘোষণা করেছেন- চুরি করে কারও সাধের চুমোর স্বাদ পাইনি বা দেইনি। ব্যক্তিত্ব নিয়ে ছাত্র জীবন পার করে দিয়েছেন।
পাওয়ার যা কবিতা অবলম্বনে কবি জিয়াউল হকের চমৎকার কয়েকটি ব্যাখ্যা যোগ্য উক্তি হল-
“অন্যায় অবিচার প্রতিরোধে বিজয়ী তরুণ
গরিব কাঙালের সবচেয়ে আপনজন।”
ছাত্র জীবনে স্মরণ যোগ্য ঘটনা, কবি সর্বহারা পার্টির মানুষ খুনকে প্রতিরোধ করে, তাদের এলাকা ছাড়া করেছেন এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের অপকর্ম প্রতিহত করেছেন।
তবে গরিব কাঙ্গালের তিনি ছিলেন চির বন্ধু । এমন কি আজীবন ঘরের চাল, ডাল, তেল চুরি করে তাদের বিলিয়েছেন। এজন্য তার মা ছোট বেলা থেকেই তাকে হাতেম তাঈ বলতেন।
‘পাইনি শুধু একটি চাঁদের রাত
চুরি করে কোন ষোড়ষীর মুখে
একটি চুমোর স্বাদ।’
যৌবনিক অভিব্যক্তি ঘটাতে তারুণ্যের আবেগ উচ্ছাসে অনেকেই জোনাক রাতে গল্প গুজব করে চুটিয়ে প্রেমে নেমে সুধম্বীী স্বাস্থ্য ষোড়ষীর সাথে গল্প গুজব করে ছলনাময়ী উপ প্রেমে প্রলুব্ধ হয়। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় কবি জিয়াউল হক কখনও অপকর্ম করে এমন অশালীন স্বাদ গ্রহণ করেননি।
কেননা, তিনি অপকর্মে না জড়িয়ে বরং পড়াশুনায় ব্যস্থ রয়েছেন। মা-বাবা , ভাই-বোন ও পাড়া প্রতিবেশীর লজ্জার ভয়ে তিনি এসব পাপ চিন্তার মনে পোষণ করেননি।
মূলকথা ঃ হিতৈষী চরিত্র গুরু মা-বাবা ও গুরু গুণে ছাত্র চরিত্র গঠিত হয়।
কবি জিয়াউল হকের আদর্শ জীবনের জন্য তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ যেন Alexender pope এর ভাষায়-
The lives of great men.
remind us that
we can lake our life sublime.
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরাও আমাদের জীবনকে যাতে মহৎ করতে পারে।
কবি জিয়াউল হক বিরচিত পাওয়ার যা কবিতাটি অনুসারে বাস্তব জীবনে ঝুসনড়ষরপ কবিতা। এ কবিতার রস বীর রস এবং কবি এখানে ধীর প্রশান্ত নায়ক।
প্রাজ্ঞ কবি জিয়াউল হককে মেধাবি হিসেবেই জানতাম আমার দশ খানা পুস্তকেরই প্রকাশনায় তিনি অর্থ দান করেছেন কিন্তু তা সত্তে¡ও তার স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলোনা। মনে হয়, তাঁর সমান স্মরণশক্তি সম্পন্ন দ্বিতীয় কারোর সাথে আদৌ আমার পরিচয় হয়নি। তাঁর বিরচিত হাজারটি কবিতার যেটিরই নাম বলি, মুখস্ত বলে দেন। জ্ঞান অভাবে আমাদের অনেকেরই যেমন জানা নাই যে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন পাঁচজন । কিন্তু শ্রদ্ধেয় বিদগ্ধ পÐিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্বেও এমন বিদ্যার বাহাদুর ছিলেন । যেমন ঃ
১। হযরত শাহ্ মখ্দুম রুপশ রহঃ। বিদ্যাসাগর অর্থ্যাৎ উলুম উপাধি ছিলো। তিনি কিন্তু ১২’শ খ্রিষ্টাব্দের বিদ্বান।
২। পক্ষান্তরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এ উপাধী লাভ করেন ১৮৩৯ সনের পহেলা মে।
৩। মৌলভী আব্দুল আলী বাহারুল উলুম অর্থ্যৎ বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে ।
৪। হযরত মাওলানা উবায়দুল্লালসুহরাওয়ার্দি। এ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে।
ইতিহাস সত্য এমন তথ্য উপাত্তা ও আমাদের সিমীত জ্ঞানের জন্য জানা নেই।
শ্রদ্ধেয় পাঠক কবি জিয়াউল হক সম্পর্কে আলোকিত মানুষ তা বুঝতে হলে তাঁর রচনাবলি আমাদের পরিষ্টী করতে হবে।