গৌরনদীর কাবিল গাইন ৩০ বছরের দিনলিপিতে প্রতিদিন হাটতে হয় ২৫ মাইল

 


মোঃ আহছান উল্লাহ :
গ্রামীন জনপদের খেটে খাওয়া অগনিত মানুষের মধ্যে একটি উদাহরন। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একজন কাবিল হোসেন গাইন ৩০ বছরের দিনলিপিতে প্রতিদিন হাটতে হয় ২৫ মাইল। সাজ সকালে খালি (শুন্য) ঝুড়ি নিয়ে এ গ্রাম সে গ্রাম ঘুরে ভাংগারী বোঝাই ঝুরি নিয়ে কোনদিন সন্ধ্যা কোনদিন রাতে বাড়ী ফেরেন।
উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের বাসিন্ধা কাবিল হোসেন গাইন জানান প্রায় ৩০ বছরের দিনলিপিতে ভাংগারীর ব্যবসায় ভারী ঝুড়ি কাঁদে নিয়ে দিনভর বয়ে বেড়াতে হয়। বেলা বাড়তেই ভাংগারীর ঝুড়ির বোঝা ভারী আর বেশি পথে পায়ে হাটা পরে। তার ব্যবসায় প্রতিদিন কম করে ২৫ মাইল পায়ে হাটতে হয়। তিনি টানা প্রায় ৩০ বছর ধরে ভাংগারীর ব্যবসা করছেন। তার বয়স ৫৭ বছর চলছে বলে জানান। তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান। বসতবাড়ী বলতে ৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে ৭ (সাত) সদস্যর সংসার ৫ ছেলে বড় ছেলেকে ধারদেনা করে একটু সুখের আশায় ওমানে পাঠিয়েছিলেন সেখানে সে অনেক কষ্টে আছে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করতে হয়। মেঝ ছেলে বিবাহ করে অন্যত্র বসবাস করে বাকী তিন ছেলে পড়ালেখা করছে।
তিনি ১৯৬২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহন করেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী এলাকার মধ্যপাড়া গামে। ছোট বেলা বাবা মা মারা যাওয়ার পর এক আত্মীয়র সুবাদে চলে আসেন গৌরনদীতে প্রথম দিকে বিভিন্ন জলাশয় থেকে মাছ ধরে বিক্রি করতেন। জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া আর যে গুলো আছে সে গুলোতে বানিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হওয়ার কারনে সে পেশা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ভাংগারী কিনে এনে মহাজনি দোকানে বিক্রি করা। সারাদিনের কেনা ভাংগারী স্থানীয় মহাজনের কাছে বিক্রি করে খালি ঝুড়ি নিয়ে রাতে বাড়ী ফেরেন। প্রতিদিন তার ৬ থেকে ৮শ টাকা আয় হয় এ দিয়েই চলছে তার জীবন সংগ্রাম।
তার ব্যাক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করার এক পর্যায় তিনি বলেন সকালে পান্তাভাত কাঁচা পিয়াচ আর কাচা মরিচ পেট পুরে খেয়ে বেড়িয়ে পরি দুপুরে চিনি ছাড়া রং চা আর রুটি কলা খাই রাতে মোটা চালের ভাত। আমার এত পথ হাটায় কোন কষ্ঠ হয় না। আমি কোন ওষুধ খাই না। মাঝে মাঝে শরীর ব্যাথা করলে লতাপাতা ছেচে রস খাই ঝামেলা শেষ।
তবে তার কোন দুঃখ নাই আছে ক্ষোভ কেননা তার তিনটি ছেলে সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (১০ম শ্রেনীতে. নবম শ্রেনীতে , ৭ম শ্রেনীতে পড়ালেখা করাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে বলে জানান। তিনি আরো জানান গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ আশপাশ উপজেলার গ্রাম গুলোর পথ-ঘাট, অলি-গলি সব তার চেনা জানা। এমনকি অনেক বাড়ীর বেশির ভাগ গ্রাম্য গৃহবধুদেরকেও তিনি চেহারায় চেনেন।